Tuesday, December 11, 2007

জেনোসাইড সেমিনার থেকে সাকিবের চিঠি

(একই সাথে সচলায়তনে প্রকাশিত)
প্রায় সাড়ে তিনশ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে কয়েকজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে সাকিব ম্যারিল্যান্ড থেকে নিউজার্সীর ইউনিয়ন শহরে গেল। ভাল লাগছিল এই ঐতিহাসিক মুহুর্ত্বে সাকিব থাকবে। অন্তত তার কাছ থেকে একটু বিশদ জানতে পারব। অপেক্ষার পালা শেষে সাকিবের ই-মেইল হাতে এলো কিছুক্ষণ আগে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে জেনোসাইড নিয়ে তার লেখাটা বাংলায় টাইপ করতে করতে আমি নিজে হারিয়ে গেলাম ১৯৭১-এ। বিশেষ করে ই-মেইলের শেষ লাইনগুলো উস্কে দিল আমার আর আমাদের সম্মিলিত অপরাধবোধ। ৭১-এর ঘাতকরা পূনর্বাসিত যখন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ আমাদের জাতীয় চেতনায় প্রচন্ডভাবে উপেক্ষিত। কি চরমভাবে আমরা এদেশের শহীদদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি। বিজয়ের পতাকা হাতে নিয়ে ভুলে গেছি যাদের রক্তে এদেশ গড়া তারা ও তাদের স্বজনদের রক্তক্ষরণ এখনও বন্ধ হয়নি। কবে হবে ৭১-এর চেতনা আমাদের জাতীয় জীবনের প্রচ্ছদপত্র? এর উত্তর আমার জানা নেই।

আমি এতো দীর্ঘ ই-মেইল কখনও পাইনি। তার লেখার প্রত্যেকটা অক্ষর কস্টে ভেজা। সাকিব লিখছে, "মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সদস্যরা যখন একের পর এক তাদের আপনজন হারাবার কথা বলতে শুরু করলো, জনাকীর্ণ সেমিনার হল পিনপতন নিস্তব্দতায় নিপতিত হলো। প্রায় তিনশত দর্শকে ভরা হলরুম প্রত্যক্ষ করতে থাকল স্বজন হারাবার কস্ট, বেদনা সংক্রামিত প্রত্যেক দর্শেকর অশ্রুসিক্ত চোখ নতুন করে দেখল ১৯৭১-এর গণহত্যার বিভীষিকা"। চাপা থাকা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়ার কস্ট সাকিবের ই-মেইলের প্রতিটি লাইনে ফুটে উঠল। আমাদের জাতীয় গ্লানি যে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারিনি, বরং তাদেরকে পুরস্কৃত করেছি ও পূনর্বাসিত করেছি। সেমিনারে একজন গবেষক বললেন, যুদ্ধাপরাধী রাজাকার প্রধানমন্ত্রী হয়েছে, রাস্ট্রপতি হয়েছে সামরিক সরকারের আমলে। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনেকটা নিষিদ্ধ করেই রাখা হয়েছিল। আমরা বারবার ভুলে যাই, দেশদ্রোহী আর যা-ই হোক, দেশপ্রেমী কখনও হয় না।

বাংলাদেশের জেনোসাইড নিয়ে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের নিউজার্সী অঙ্গরাজ্যের কীন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ১৯৭১ সেমিনার হলো ডিসেম্বরের ৯ তারিখে। গণহত্যা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী দেওয়া হচ্ছে। তাতে যোগ হচ্ছে বাংলাদেশের ১৯৭১-এর গণহত্যার বিষয়টি। গতকাল ছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি। কীন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশে ১৯৭১-এর গণহত্যা নিয়ে গ্রাজুয়েট কোস ওয়ার্ক সকল মুক্তিযুদ্ধের মননের মানুষকে গভীরভাবে আলোড়িত করে আসছিল। ৭১ নিয়ে স্বপ্নের বুনন তাহলে বাস্তব হচ্ছে। ১৯৭১, মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা, নির্যাতন, যুদ্ধাপরাধ, বিচার- এসব বিষয় যখন আমাদের সার্বিক জীবনধারায় বেদনাদায়কভাবে উপেক্ষিত তখন ভিন মার্কিন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে এধরণের যুগান্তকারী পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে নতুন প্রজন্মের কিছু সচেতন সাহসী যোদ্ধা। এরা কয়েকজন ব্যক্তিগত উদ্যোগে কীন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে দেখিয়েছেন ১৯৭১-এর গণহত্যার ব্যাপকতা ও গভীরতা। তাদের ভাবনার ফসল গতকালের সেমিনার। নিউজার্সীতে প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা ড: নুরুন্নবী তাদের উদ্যোগের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। জড়ো করতে সাহায্য করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের আর শহীদ পরিবারের স্বজনদের। ৭১-এর চেতনা তাড়িত একটি ভাবনার সফল ও প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পাচ্ছে কীন বিশ্ববিদ্যালয়ে।

১৯৭১ কোন বিবর্ণ স্মৃতি নয়। সময়ের ও অবস্থানগত ব্যবধানে ১৯৭১ কে ব্যবচ্ছেদ করা যায় না। শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দীন হোসেনের ছেলেরা যখন অশ্রুসিক্ত কন্ঠে ভোররাতে তাদের বাবাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছিলেন তখন শহীদ সিরাজউদ্দীন আবারও ফিরে এলেন প্রবলভাবে। শাহীন শাহ মনে করিয়ে দিলেন তার ভাই জহির রায়হান আর শহীদউল্লাহ কায়সারের কথা। সিলেট মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডা: শামসউদ্দীন ভেবেছিলেন হাসপতালে কর্মরত অবস্থায় তাকে কেউ ক্ষতি করবে না। জেনেভা কনভেনশন আর মানবাধিকার কনভেনশন বর্বর হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করেনি ড: জিয়া আহমেদের বাবাকে। সিলেট হাসপাতালের পাশে নিমর্মভাবে তার সহকর্মীদের সাথে কর্মরত অবস্থায় শহীদ হলেন। একইভাবে শহীদ মেজর হাসিবের কন্যা তার ৭ বছরের স্মৃতির পাতা থেকে নিয়ে এলেন শেষবারের মতো দেখা তার বাবার মুখটির কথা। একইভাবে চট্রগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের সার্জন ডা: আশরাফ আলী তালুকদারকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে হত্যা করা হয়। বাবার মৃত্যুর সাক্ষী তখনকার মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ড: মাসুদুল হাসানও গুলিতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিলেন। রাস্তার পাশে ফেলে রাখা বাবার মৃতদেহের পাশ থেকে উদ্ধার পাওয়া আহত ড: মাসুদুল হাসানের রক্তক্ষরণ এখনও হচ্ছে। আরও অনেকের স্বজন হারাবার কস্টের চিত্র শব্দে ধারণ করা সম্ভব নয়। কথা দিচ্ছি, বন্ধুবর মূল ডকুমেন্টটি পাঠালে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

এসব কস্ট, বেদনা আর যন্ত্রণার মধ্য থেকে নিস্ক্রান্তির একমাত্র পন্থা: যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। ১৯৭১এর চেতনাকে আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আমাদের জাতীয় জীবনে মূলমন্ত্র হিসেবে ফিরিয়ে আনার খুব দরকার। শোষণমুক্ত, ধর্মনিরপেক্ষ আর গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের কোন বিকল্প নেই। স্বৈরাচারের হাত ধরেই পূনর্বাসিত হয়েছে যুদ্ধাপরাধীরা। খেয়াল রাখতে হবে, স্বৈরাচার যাতে আবারও ছদ্মবেশে নতুন করে ফিরে আসতে না পারে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আমাদের আন্দোলন আরও বেগবান হোক। তাদের বিচার হোক আগামীকালের বাস্তবতা । এই আহবান থেকে সরে আসব কিভাবে? তিরিশ লাখ শহীদ আর তাদের স্বজনরা আবারও স্মরণ করিয়ে দিল, ১৯৭১ শেষ হয়নি। যুদ্ধ চলছে। রক্তক্ষরণ হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন তাড়িত চেতনায় উদ্ভাসিত নতুন প্রজন্ম অপেক্ষা করছে বিজয়ের পতাকা হাতে। তাদের বিজয় মিছিলে যোগ দিতে হলে ঠিক এক্ষুণি এগিয়ে আসুন দৃপ্তপদে।

Saturday, October 27, 2007

জামাতী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার

যুদ্ধাপরাধী রাজাকার জামাতীদের বিচার হয়নি বলে তারা যে বিচারের উর্ধ্বে নয় তা প্রমাণের এতোটা উপযুক্ত সময় আগে কখনও আসেনি। গতকাল রাজাকার মুজাহিদ যে বক্তব্য রেখেছেন তার পেছনে যে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির প্রচ্ছন্ন পৃষ্ঠপোষকতা আছে তা আংগুল দিয়ে দেখাবার কোন প্রয়োজন নেই। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৩৬ বছর পর রাজাকার-আলবদর যুদ্ধাপরাধী তাদের ছানাপোনাদের আচরণ এখন নেক বেশী উদ্ধত। এতে হতাশ হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। অন্তত: মুজাহিদ যে খোলা চ্যালেঞ্জ দিয়ে দিলেন তার দাঁত ভাংগা জবাব দেয়ার সময় এসেছে।

তিরিশ লাখ লোক প্রাণ দিল আর তার বিনিময়ে রাজাকার-জামাতীরা ইসলামের পসরা সেজে জাতীয়তাবাদীদের ঘাড়ে শাখামৃগের মতো আরোহন করে দেশরক্ষার মায়াকান্না দিয়ে যাচ্ছে। কখনও একবারও শুনবেন না এদের মুখ থেকে যে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এরা। জামাতীরা যখন এদেশের মা-বোনকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর পায়ে ইয়ানত হিসেবে তুলে দিয়ে দেশসেবা করেছিল। নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল নিরপরাধ মানুষদের। কোন অনুশোচনা নেই এই পশুপোষ্যদের মুখে। কি ভয়াবহ নির্বিকার অনুভূতি। কি নির্লজ্জতা।

জিয়ার সামরিক সরকার বৈধতার সন্ধানে ইসলামী জাতীয়তাবাদী থিওরী প্রবর্তন করার সুবাদে সকল নিমকহারাম যুদ্ধাপরাধী রাজাকাররা হয়ে গেল দেশপ্রেমী জাতীয়তাবাদী । পূনর্বাসিত হলো তারা। তারা কোন জনমে কোন অপরাধ করেছিল না কি? ইতিহাস বিকৃতির উৎসব চলছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রান্তিকীকরণ চলছে। হালকা করে দিতে চায় মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামী ইতিহাস। তাই, এসব রাজাকারদের ব্যাধির নিরাময় করার দরকার। দরকার আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের। সকল নিমকহারাম রাজাকার ও তাদের পোষ্যদের নিপাত না হওয়া পর্যন্ত চলুক আরেকটি যুদ্ধ। শুরু হোক তাদের মুখোশ খুলে দিয়ে তাদের আসল চেহারা তুলে ধরার। বিচারের এই দাবীকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে আজকের সচেতন প্রজন্ম যে অনেক বেশী প্রস্তুত তা আমাদের সবার মনে জন্ম দিচ্ছে নতুন প্রত্যয় ও প্রত্যাশা।

বর্তমান তত্বাবধায়ক সরকার বিএনপি-জামাত মোর্চার এক্সটেনশন তার প্রমান চোখের সামনেই আছে। ফখরুদ্দীন আহমেদ নিজে স্বাধীনতার পরও বহু বছর পাকিস্তানী সরকারের চাকরি করেছেন। মঈন আহমদে নিজে সেখানকার গ্র্যাজুয়েট। তাদের বায়োডাটাতে তা জলজল করে জ্বলছে। মঈনুল হোসেন তো নিজে জামাতীদের ব্যাপারে অন্ধ। আরেক উপদেস্টা জেনারেল মতিন তাদের সপক্ষে ক'দিন আগে সাফাই গেয়ে গেলেন। সামরিক গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম হর্তাকর্তা ক'দিন আগ পর্যন্ত ছিলেন যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের ছেলে। আর এখন যারা আছেন তাদের সাথেও জামাতীদের দহরম মহরম আছে বলে পত্র পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।

সরকার যখন দূর্নীতির গান দিয়ে রাজনীতিবিদ শিকার শুরু করলো তাতে কিন্তু জামাতীদের পশমও ধরা হয়নি। চুনোপুটি দু'য়েকজনকে শ্রীঘরে ঢুকালেও আমীররা সযতনে আছেন। চট্রগ্রামের কুখ্যাত জামাত নেতা শাহজাহান চৌধুরী কয়েক মিনিটের জন্য ফস্কে যায়, যখন অন্যদের জন্য দূর্নীতি দমন কমিশনে দুয়ার গোড়ায় যৌথ বাহিনী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে পেরেছে। জামাতের সাথে সন্ত্রাসীদের সংযোগ নিয়ে প্রামাণ্য তথ্য থাকলেও সরকার নির্বিকার। বিষয়টা বেশ স্পস্ট। ১/১১ ঘটল যখন সামরিক বাহিনী দেখল তাদের জাতীয়তাবাদী-জামাতী শিবির মুমূর্ষ অবস্থায় আছে। জামাতীদের হাত ধরে তাই নতুন জাতীয়তাবাদীরা পূনর্জন্ম লাভ করবে, ক্ষমতার দুধ ভাত খাবে। তাই, দুধ দিয়ে জামাতী সাপদের পোষা হচ্ছে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়ো ট্রাজেডী হচ্ছে রাজাকার জামাতীদের পূনর্বাসন। আর ইতিহাস সাক্ষী এটা হয়েছে পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর, তার আগে নয়। ১৯৭৫ আগে মুজাহিদ, কামরুজ্জামান, সাঈদী আর গোলাম আযম কোথায় থাকতেন? সামরিক সরকারগুলো তাদের রাজনৈতিক বৈধতার জন্য বারবার মৌলবাদ জামাতীদেরকে ব্যবহার করেছে। এখনও যদি ব্যবহার করে তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সেনাবাহিনীতে জামাতীদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব-প্রতিপত্তি দেশের স্বাধীনতা ও সংহতির জন্য বিশাল হুমকি। তাই, বর্তমান সময়েও জামাতের মুজাহিদরা আশংকায় বাস করে না। তাদের দূর্নীতি কারও চোখে পড়ে না। তাদের দলেও কোন সংস্কারের দরকার হয় না। কারণ, খুবই স্পস্ট। তারা এসব দুনিয়াবী দাবী ও ম্যান্ডেটের উর্ধ্বে বাস করে। তাদের এনজিওগুলোর কোন তদন্ত হয় না। জেএমবি'র সাথে ইসলামী ব্যাংকের লেনদেনের সম্পর্ক থাকলেও সেই তদন্ত ধামাচাপা পড়ে থাকে। দশ ট্রাক অস্ত্র পাচারের মামলাও চাপা পড়ে থাকে। অসংখ্য প্রামাণ্য তথ্য দিয়ে এই লেখার পাতা ভরে দেয়া যাবে। তবে অন্ধজনে আলো দেয়ার চেস্টা বৃথা। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা,দেশপ্রেম, সার্বভৌমত্ব- এসব প্রত্যয়গুলো গোষ্ঠীগত স্বার্থে সংরক্ষিত। জামাতী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আর মৌলবাদী অপশক্তিকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত তাদের উদ্ধত আচরণ সহ্য করতে হবে। আর যদি তাদের এই আচরণ অসহ্য মনে হয়, তাহলে আরেকটি যুদ্ধে নামতে হবে যাতে এসব যুদ্ধাপরাধীদেরকে ঝেঁটিয়ে চিরতরের জন্য বাংলার মাটি থেকে বিদায় করা যায়।

Thursday, September 06, 2007

ছায়ার সাথে যুদ্ধ:

বাংলাদেশের সামরিক সরকার কি তার নিজের ছায়ার সাথে যুদ্ধ শুরু করেছে? সরকার কি ভীত আর সন্ত্রস্ত হয়ে আছে নিজের স্বৈরাচারী ছায়া নিয়ে? বিডিআর-এর মাধ্যমে ২০০টি ওপেন মার্কেট খুলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে চৈতন্যোদয় হলো। স্বয়ং সরকার নিজে ব্যবসায়ী-দোকানদার-সওদাগরদেরকে ক্যান্টনমেন্টের পাশে বিলাসী ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে ডেকে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, "বাছারা রোজা আসছে। একটু দয়া করো। লাভ করো। অতি মুনাফা করো না"। রয়েসয়ে। ব্যবসায়ীরা গদগদ হয়ে উঠল। বলল, এ সভা আরো আগে হওয়া উচিত ছিল। যাক, বিলম্বে হলেও বোধোদয়ের জন্য শুকরিয়া। হয়রানি হবে না বলে সেনাপতি আশ্বস্ত করলেন। তার মানে, আগে হয়রানি হতো। হয়রানির কথা মুখ ফুটে বলতেও ভয়। ভয় দেখিয়ে কি আর জয় করা যায়? তাই, আজকের সভা শেষে এবার নির্ভয়ে সবাই ব্যবসাপাতিতে মন দিবে। যুদ্ধটা কি ছায়ার সাথে?

দৈনিক ইত্তেফাকে সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখের লেখা পড়ে মনে হলো, সামরিক বাহিনী সত্যি সত্যি ছায়ার সাথে যুদ্ধ শুরু করেছে। সাবধান করে দেয়া হচ্ছে অনেককে। মার্কিন মুল্লুকে বাংলাদেশ সরকারী গোয়েন্দা পাঠিয়েছে। বিদেশে প্রবাসী কারা সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে পাঁয়তারা করছে তাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য। সামরিক সরকারের মুখপাত্র মঈনুল হোসেনের পত্রিকা ইত্তেফাক ছাপিয়েছে এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি:
"এই বিশেষ মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশের একটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তিন কর্মকর্তা এরই মধ্যে নিউইয়র্কে এসে পৌঁছেছেন। গোয়েন্দারা বৈধ-অবৈধ নির্বিশেষে পেশাজীবী, রাজনীতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করছেন এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে আন্দোলনকারীদের নাম-ধাম এমনিক অভিবাসন মর্যাদা পর্যন্ত সংগ্রহ করছেন। ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায় যে, প্রাবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজনকে গোয়েন্দাদের সনাক্ত করা তেমন কোন কঠিন কাজ নয়। আন্দোলনকারীদের পুরো তথ্য-উপাত্ত, দেশের বিমান বন্দর ও নিজনিজ এলাকার থানাগুলোতে পাঠানো হবে। সূত্রটি আরো জানায় যে, জন্মসূত্রে বাংলাদেশী অথচ মার্কিন পাসপোর্টধারী কোন আন্দোলনকারীই যাতে নিস্তার না পায় সে লক্ষ্যে তাদের প্রতিকৃতি ও ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সরবরাহ করা হবে। এছাড়া প্রবাস থেকে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার নামে যারা কোন প্রকার পারিশ্রমিক ছাড়া দেশের পত্র-পত্রিকায় ভিত্তিহীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ পরিবেশন করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত রয়েছে তাদের নাড়ী নক্ষত্রেরও খোঁজ নেয়া হচ্ছে..."।
না, ইত্তেফাককে বাহবা দেওয়ার কিছু নেই। ক্যান্টনমেন্টের দোর্দন্ড প্রতাপের এই সময়ে তারা যে দু:সাহস দেখাননি, তা কি মুখ ফুটে বলতে হবে? যেমন খসড়া দেয়া হয়েছে, তেমনটা লেখা হয়েছে পত্রিকার পাতায়। এধরণের প্রতিবেদন দিয়ে সরকার কাকে ভয় দেখাতে চায়? যারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাত করেছে তাদেরকে, না যারা গণতন্ত্র ও নির্বাচিত সরকারের প্রত্যাবর্তন দেখতে চায় তাদেরকে? প্রতিবেদনটি ইংরেজী পত্রিকায় উঠেনি। উঠলে ভাল হতো। তবে ইত্তেফাকে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যে হয়রানি করার আর চোখ রাঙ্গানোর অশনি ও অশুভ সংকেত তা কি বলার দরকার আছে? বড়োই দুর্ভাগা জাতি। বারবার এখানে জনগণকে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয়। তাতে অশুভ শক্তি পিছু হটে, রং আর ভোল পাল্টায়। ট্রাক থেকে সহাস্যে গোলাপ ফুলের শুভেচ্ছা নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে ফিরে যায়। নব্বইয়ের এপিসোড আবারও কি দেখা যাবে আঠারো বছর পরে?

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্দেশ্য সৎ ছিল। নিরপেক্ষ নির্বাচন আর দুর্নীতির বিরোধী কার্যক্রম শেষাবধি নতুন রাজনৈতিক দল তৈরীর ফন্দিবাজিতে গিয়ে ঠেকল। এধরণের ধান্ধাবাজির কি কোন দরকার ছিল? নতুন পদলেহীরা সহাস্যে রাজনীতির দাবার ঘুঁটি চালছে। তবে জনগণ যে ক্রমশ:ই বুঝতে পারছে সামরিক বাহিনীর ধান্ধা কি? সব দূর্নীতির হিসেব বেরোচ্ছে, সামরিক বাহিনীতে ডিফেন্স পার্চেজের দূর্নীতির শ্বেতপত্র কি বের হবে? তারা কি ধোয়া তুলসী পাতা? হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যায়, তার খবর কে রাখে? নির্বাচন কমিশনের অন্যতম সদস্য একজন অব: জেনারেল পার্বত্য এলাকার জন্য বরাদ্দ গম লোপাট করে বাধ্যতামূলক অবসরে গিয়েছিলেন, সেই কথা অনেকেরই অজানা না। ছোট উদাহরণ। দরিদ্র বাংলাদেশের দু লক্ষ সামরিক সদস্যের জন্য বিলাস বহুল চোখ ধাঁধানো ক্যান্টনমেন্ট তৈরী না করে ১৫ কোটি মানুষকে এই ক্যান্টনমেন্টের বাসিন্দা করার দরকার। চলমান সংস্কারের জোয়ারে সামরিক বাহিনী কেন বাদ পড়বে? বের হোক শ্বেতপত্র সামরিক বাহিনীর পেছনে ব্যয় বরাদ্দ কতো? এর বাইরে বেসামরিক বাজেট থেকে কতোটা লুটেপুটে নেওয়া হয়? ডিফেন্স বাজেটের নামে কতোটা লুটপাট হয়? বাংলাদেশ কার সাথে যুদ্ধ করবে? নিজের ছায়ার সাথে? এখন যুদ্ধ শুরু হয়েছে নিজের ছায়ার সাথে।

জনগণের শক্তি কখনও বন্দুকের নলের কাছে হার মানে না। তা হলে পাকিস্তান বাহিনী এখনও শাসন করে যেত অখন্ড পাকিস্তানে। লেজেহোমো এরশাদ বসে থাকতো ক্ষমতার মসনদে। একসময় পাকিস্তানী বাহিনী আর তাদের পদলেহীরা বলতো পাকিস্তান বাঁচলে ইসলাম বাঁচবে। এখন আবার একই প্রতিধ্বনি শুনি। সামরিক বাহিনী আর দেশের অস্তিত্ব একাকার হয়ে গেছে। স্বৈরাচারের নখর দেখা যায়? ব্যয়বহুল নেইল ওয়ার্ক দিয়ে কি তা ঢাকা যায়? বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ছাত্র, সাংবাদিক আর সাধারণ জনতাকে যেভাবে অপদস্থ ও মিথ্যে বানোয়াট মামলায় জিম্মি করা হয়েছে তা কি পাকিস্তানী শাসকদের অপচ্ছায়া নয়? সত্য কি আর চাপা রাখা যায়? দেশের জনগণকে ঠেঙ্গিয়ে এখন বিদেশ বিভুঁইয়ে ভয় দেখানো শুরু হয়েছে? সামরিক সরকার ভয় কাকে পাচ্ছে? জনগণকে, না নিজের ছায়াকে?

Wednesday, August 22, 2007

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বিবিসির আপডেট


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্ফোরন্মুখ ঘটনায় সেনা বাহিনী পিছু হটেছে। ক্যাম্পাস থেকে সেনা বাহিনী তাদের ছাউনি গুটিয়ে নিয়েছে আজ ভোর পাঁচটার মধ্যে। ছাত্রদের উপর সেনা বাহিনী ও পুলিশের নির্যাতনের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে ছাত্র জনতা। বিবিসি বাংলা এব্যাপারে চমতকার নিউজ কাভারেজ ও বিশ্লেষণ দিয়েছে। ছাত্রদের সাথে যোগ দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ করার আহবান জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি। রাজনৈতিক অধিকার ও দ্রুত নির্বাচনের দাবী জানানো হয়েছে। জেগে উঠুক ছাত্র জনতা। আবারও উড়ুক গণতন্ত্রের বিজয় কেতন। নির্বাসিত হোক সামরিক কর্তৃত্ব ও স্বৈরাচার। তাহলে আজ সকালে প্রচারিত প্রায় ১৫ মিনিটের বিবিসির নিউজ কাভারেজ শুনুন এখানে:

Get this widget Share Track details

Friday, August 17, 2007

তুমি রবে সংগ্রামে

ভিডিওটি এনওয়াই বাংলার সৌজন্যে:

বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে আমার দেখা সেরা অনলাইন ভিডিও। জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করল ঘাতকরা। এখনও তারা তাদের প্রাপ্য শাস্তি পায়নি। ঘাতকরা বিভিন্ন সময়ে পুরস্কৃত হয়েছে। বিচারের বাণী আর কতোকাল নীরবে নিভৃতে কাঁদবে? দেখুন তাহলে ভিডিওটি:





Print Page

Monday, August 06, 2007

রাস্ট্রপতি, আর্মী আর বন্যা:

(একই সাথে দেশীভয়েসে প্রকাশিত)
দেশে চলছে ভয়াবহ বন্যা। দেশের এই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে গতকাল রাস্ট্রপতি সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে হাজির হয়ে জেনারেলদেরকে গণতন্ত্রের প্রহরী হিসেবে প্রত্যয়ন দেওয়ার কারণ কি? এই মূহুর্ত্তে সেনাবাহিনীর দায়বদ্ধতাকে স্মরণ করিয়ে তাদের প্রশস্তি দেওয়ার কোন যুক্তি নেই। রাস্ট্রপতি বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কথা না বলে সশস্ত্র বাহিনীর ১১ই জানুয়ারীর অবদানকে দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাইলেন। সেনাবাহিনীর অবদান নিয়ে কারো মধ্যে প্রশ্ন নেই, তবে হঠাৎ করে সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে হেডলাইন করার যৌক্তিকতা বেশ অবান্তর মনে হলো। পাশাপাশি বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা ও দূর্দশাগ্রস্থ লোকদের দুর্ভোগের চিত্র আবারও স্মরণ করিয়ে দিল, সরকারী পদক্ষেপের অপ্রতুলতা। বানভাসি লোকগুলো সাহায্য পাচ্ছে না আর বন্যার বিষয় বাদ দিয়ে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে রাস্ট্রপতির প্রশস্তি পর্যবেক্ষকদের মনে বেশ অযাচিত ঔৎসুক্যের উদ্রেক ঘটাবে। তাহলে গতকালের টিভি সংবাদ থেকে নেওয়া অংশটুকুতেই দেখুন "রাস্ট্রপতি, আর্মী আর বন্যা":

Sunday, August 05, 2007

মামা, পাবলিক ঘুমায় কেন?


যারা আমার ভাগ্নেকে চেনেন না, তাদেরকে বলছি আমার সবে ধন নীল মনি ভাগ্নে আমার বাসার সবচেয়ে সচল মানুষ। কথার খই তার মুখে ফুটবে দিন রাত। মাঝে মাঝে ভাবি, রাতে কি সে ঘুমায়? ঘুমেও বোধ হয় কথা বলে। ছুটির দিনে সকাল সকাল ঘূম থেকে তুলে দিয়ে তার দিনের যাত্রা শুরু করলো। রুমে হুটহাট করে ঢুকেই বলে উঠল, পাবলিক এতো ঘুমায় কেন? আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম, "এই বেকুব বাজে তো সকাল সাতটা। ছুটির দিন একটু ঘুমাই"। এই বার বলে উঠল, "না মামা, তোমাকে বলছি না। তুমি তো ২৪ ঘন্টাই জেগে থাক, বলছি পাবলিককে"। পাবলিক নিয়ে তার অতি উৎসাহ দেখে বললাম, "পাবলিক কি করবে? এমনিতেই ঝড় ঝঞ্চা চলছে, যতো ঘুমায় ততই ভাল"। না, মামা। তুমি কিছুই বুঝ না, ভাগ্নের বোদ্ধা উত্তর। গতকাল গেলাম র‌্যাংগস ভবন ভাংগা দেখতে। পাবলিকের ভীঁড় নেই। বন্যা আসল। লোকজন ত্রাণ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করবে, তারও কোন খবর নেই। পাড়ায় পাড়ায় চান্দা নিবে, না কোন আওয়াজ নেই। এমনকি স্বয়ং সেনাবাহিনী একদিনের বেতন নিয়ে হাজির হলো, তাতেও দেখি পাবলিকের ঘুম ভাংগে না"।

এবার একটু নড়চড়ে উঠে বিছানায় বসলাম। ভাগ্নে আমার স্মার্ট। হাতে এক কাপ চা। আহা, তাজা এক কাপ চা। বেড টি। এরকম ভাগ্নে যার আছে তার যে কি সৌভাগ্য। শুধু হাতের কাছে ডাক্ট টেপ রাখার দরকার। যখন বেশী কথা উতরায়, তখন খালি মুখে মেরে দিলেই হবে। হাতে চা নিয়ে চুমুক দিয়ে ভাগ্নের সহাস্য বদনের দিকে তাকালাম। ভাগ্নে জানে, মামাকে কি দিয়ে কাইত করা যায়। মনে মনে বলি, অনেক বড়ো হও মামা। এবার আমি ভাগ্নের দিকে তাকিয়ে বললাম, মামা র‌্যাংগস ভবন তড়িঘড়ি করে ভেংগে কড়িৎকর্মা সরকার দেখাল, "তারা পারে"। র‌্যাংগস ভবন ২৪ ঘন্টার কম সময়ে ভেংগে তার প্রমান করলো, বিলম্বেই বিপদ। এছাড়া মানুষের মন, কখন কোন দিকে যায়? ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি আবার ম্যানেজ করে ২২ তলা দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে লজ্জা না? তাই, সরকার সেই চান্স নিতে চাইল না। এছাড়া, মানুষের জিনিস পত্র সরিয়ে নিতে আরেকটু সময় দিলে তো নাটক জমে না। হনুমানের বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। ২২ তলা পাহাড় মাথায় নিয়ে পাবলিকের মুখে হাসি ফুটাতে চাইল। কিন্তু তারপরও পাবলিক ঘুমায় কেন?

মামা, "বন্যার কি হবে"? ভাগ্নের উৎকন্ঠা। পাবলিক যদি ঘুমায় তা হলে কেমনে কি হবে? আরে বেকুব, পাবলিক কি করবে। পাবলিকরে নেতারা শিখিয়েছে, আল্লাহর জিনিস আল্লাহ নিবে। এটা নিয়ে বলার কি আছে? তাই, পাবলিক দেখছে, আল্লাহর রহমতের পানি দিয়েছে। পুরো দেশের আধেকটা রহমতে ভাসছে। বাকী অর্ধেকটা ছুই ছুই করছে। এসব উপরওয়ালার ইচ্ছা। উপরওয়ালা বলল, "হায়রে হনুমান, দেশ সেবা করবি। নে, বানের পানি দিলাম। এবার পাবলিকের সেবা কর"। আর পাবলিক বলে, এই দেশের জন্মের ৫ বছর থেকেই তো সেবা করে আসছে খাকীর দল। পরিণতি জানা। তাই, যা করার করো। বন্দুকের নল দিয়ে দেশ রক্ষা করা যায়, দেশ স্বাধীন করা যায়, শত্রুকে দমন করা যায়। কিন্তু মানুষের মন জয় করা যায় না। এই সহজ কথা কি আর হনুমানের দল বুঝে? তাই, পাবলিক এখন ঘুমায়।

ভাগ্নে আমার লেকচারে বিরক্ত। বলল, "মামা, তুমি কিছুই জান না। আমার কলেজের সুমনার দিকে তাকানোই যায় না"। র‌্যাংগস ভবন, বন্যা, তারপর সুমনা? কিছুই বুঝলাম না। সব তালগোল পাকিয়ে গেল? অবাক হয়ে বললাম, "সুমনার আবার কি হলো"? আহা, মামা বড়োই দু:খের কথা। সুমনা কলেজে নতুন নতুন মডেলের গাড়ী নিয়ে আসতো। কতো ফুটানি দেখাতো। এখন সুমনার বাসে করে আসারও জো নেই। সর্বস্ব খুইয়েছে দুদকের কাছে। বাবা ফেরারি। গাড়ী থানায়। চোখ থাকে ছলছল। খুব মায়া লাগে। আমি ভাগ্নের দিকে হাতজোড় করে বললম, "দয়া করে মায়া দেখিয়ে সুমনাকে আমার বাড়ীতে নিয়ে এসো না। শেষে দুদক আমার পেছনে লাগবে"। ভাগ্নের ধান্ধার হিসেব কি তা বুঝার চেস্টা করলাম।

সুমনার ব্যাপারটা নিয়ে নাড়াচাড়া না করে বললাম, "পাবলিকের টাকা কই? সব একাউন্ট ফ্রীজ করে রাখা হয়েছে"। তাই, পাবলিক টাকার থলি নিয়ে এখন আর ফখরু চাচার কাছে যাবে কিভাবে? রাজনৈতিক নেতারা আপন প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত। "সেই দিন কি আর আছে? দিন বদলাইছে না"- তাই পাবলিক কাঁথা বালিশ নিয়ে ঘুমায় আর বায়োস্কোপ দেখে। আর হনুমানের দল ভাবছে, "স্যার এভরিথিং আন্ডার কন্ট্রোল"। তবে বানভাসি লোকজন যখন আশ্রয়ের সন্ধানে শহরের দিকে ছুটবে তখন কি ক্যান্টনমেন্টে তাবু খাটাবার মতো জায়গা থাকবে তো?


Print Page