Wednesday, August 01, 2007

শেয়ালের খোঁয়ারে গণতন্ত্রের ইনকিউবেটর


লিবারেল আর্টস ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্র হয়ে বিজ্ঞান নিয়ে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। নিজের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা দেখে নিজেই লজ্জিত হয়ে পড়ি। তাই আমার মন বিজ্ঞানমনস্ক না হয়ে বিজ্ঞানভীত হয়ে উঠে। আশেপাশে বোদ্ধা মানুষের দল যখন জ্ঞান-বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলেন তখন তাদেরকে সমীহ করে চলি। শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে উঠে। ছোট বেলায় স্কুলে থাকতে একবার বিজ্ঞান ল্যাবে ট্যুর করার কথা হুট করে মনে পড়ল। চোখ আটকে থাকল ডিম তা দেওয়ার ইনকিউবেটরের দিকে। বড্ডো রহস্যময় মনে হলো। কি অবাক ব্যাপার!! মুরগীকে কতো কস্ট করে ডিমে তা দিতে হয়। ছোটবেলায় অপেক্ষায় থাকতাম কখন বাচ্চাগুলো ফুটবে। তারপর ফুটফুটে তুলতুলে বাচ্চাগুলো ডিমের খোসা থেকে বের হয়ে আমাদের হাতের তালুতে বড়ো হতে থাকতো। আমরা সবাই কতো না নাম দিতাম এই তুলতুলে বাচ্চাদেরকে। বড্ডো আদরের। তাই, ইনকিউবটর দেখে আমার সেই অল্পবয়সী মনে প্রশ্ন উঁকি দিলো, “আহারে এতোগুলো ছোট বাচ্চাকে কে যত্ন করবে”? এরা পাবে না মায়ের আদর। দু’দিকে ডানার মধ্যে তুলতুলে পশমে মাথা গুঁজে চোখ বন্ধ করে স্বস্তি পাবে না। ইনকিউবেটরের বদ্ধ হাওয়ায় জন্ম নিয়ে এদেরকে বড়ো করা হবে খাদকদের উদরপূর্তির জন্য। ইনকিউবেটরকে নৃশংস মনে হয়েছিল। হঠাৎ করে এতোদিন পর এই পড়তি বয়সে আবার ইনিকউবেটরের কথা মনে পড়ে গেল।

দেশীয় মুরগীর ডিমান্ড বড্ডো কম। ফার্মের মুরগীর যোগান বেশী। কারণ, এতে মুনাফা বেশী। তাই, পোলট্রি ফার্মের ব্যবসায়িক বুদ্ধিটি দেশের সামরিক সরকার রপ্ত করে নিতে বিলম্ব করেনি। ১৯৭৫ সাল থেকেই তো এদেশের সামরিক বাহিনী গণতন্ত্রের বাচ্চা সেনাছাউনির ইনকিউবেটরে জন্ম দিয়েছে। তাতে নাদুশ নুদুশ ছানা বেরিয়েছে অনেক। তাদের সৎকার করে সেনাপ্রধান জিয়া আর এরশাদ গনতন্ত্রকে সংহত করেছেন। এখন ২০০৭। ইনকিউবেটর প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে। যোগ দিয়েছে এটমিক ঘড়ি। তাতে সময়ের হিসেব হয় একেবারে নিঁখুত। তাই, এখন সহজেই বলা যায়, নতুন ছানার জন্ম হবে কবে? মেশিনে গরম তা দিয়ে রাখা হচ্ছে। দিনক্ষণ ঠিক করে নব ঘুরিয়ে তাপমাত্রা বাড়িয়ে কমিয়ে যথাসময়ে আবার এক দল নতুন ছানা ইনকিউবেটর থেকে বেরিয়ে দাঁত কেলিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে। আমরা নিরীহ পাবলিক। জ্ঞান বিজ্ঞান বুঝি না। প্রযুক্তি বুঝি না। অংকের হিসেব বুঝি না। আমরা খোসা ভেংগে বেরিয়ে আসা ডিমের বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে চোখ গোল করে বলব, “খাসা হয়েছে”। দেশী বিদেশী এডভাইজাররা কোরাস গেয়ে বলবেন, “বাচ্চাগুলো সুস্থ। প্রবৃদ্ধির সমূহ সম্ভাবনা। মুক্তি এবার হবে। স্বয়ম্ভরতা আসবে”। দিকে দিকে মোসাহেবের দল চোঙ্গা মাইক দিয়ে প্রশস্তি গাইবে। তাদেরকেও সিস্টেমে নিয়ে আসা হয়েছে। পাবলিক কি জানে, শেয়ালের খোঁয়ারে গণতন্ত্রের ইনকিউবেটরে নতুন ছানাদের পরিণতি কি হবে? দু:খজনক হলেও সত্য, পাহারাদার শেয়ালের প্রশস্ত হাসিতে আমরা সবসময়ই উষ্ণতা ও আস্বস্তি খুঁজে বেড়াই!!!

No comments: