Tuesday, December 11, 2007

জেনোসাইড সেমিনার থেকে সাকিবের চিঠি

(একই সাথে সচলায়তনে প্রকাশিত)
প্রায় সাড়ে তিনশ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে কয়েকজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে সাকিব ম্যারিল্যান্ড থেকে নিউজার্সীর ইউনিয়ন শহরে গেল। ভাল লাগছিল এই ঐতিহাসিক মুহুর্ত্বে সাকিব থাকবে। অন্তত তার কাছ থেকে একটু বিশদ জানতে পারব। অপেক্ষার পালা শেষে সাকিবের ই-মেইল হাতে এলো কিছুক্ষণ আগে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে জেনোসাইড নিয়ে তার লেখাটা বাংলায় টাইপ করতে করতে আমি নিজে হারিয়ে গেলাম ১৯৭১-এ। বিশেষ করে ই-মেইলের শেষ লাইনগুলো উস্কে দিল আমার আর আমাদের সম্মিলিত অপরাধবোধ। ৭১-এর ঘাতকরা পূনর্বাসিত যখন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ আমাদের জাতীয় চেতনায় প্রচন্ডভাবে উপেক্ষিত। কি চরমভাবে আমরা এদেশের শহীদদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি। বিজয়ের পতাকা হাতে নিয়ে ভুলে গেছি যাদের রক্তে এদেশ গড়া তারা ও তাদের স্বজনদের রক্তক্ষরণ এখনও বন্ধ হয়নি। কবে হবে ৭১-এর চেতনা আমাদের জাতীয় জীবনের প্রচ্ছদপত্র? এর উত্তর আমার জানা নেই।

আমি এতো দীর্ঘ ই-মেইল কখনও পাইনি। তার লেখার প্রত্যেকটা অক্ষর কস্টে ভেজা। সাকিব লিখছে, "মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সদস্যরা যখন একের পর এক তাদের আপনজন হারাবার কথা বলতে শুরু করলো, জনাকীর্ণ সেমিনার হল পিনপতন নিস্তব্দতায় নিপতিত হলো। প্রায় তিনশত দর্শকে ভরা হলরুম প্রত্যক্ষ করতে থাকল স্বজন হারাবার কস্ট, বেদনা সংক্রামিত প্রত্যেক দর্শেকর অশ্রুসিক্ত চোখ নতুন করে দেখল ১৯৭১-এর গণহত্যার বিভীষিকা"। চাপা থাকা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়ার কস্ট সাকিবের ই-মেইলের প্রতিটি লাইনে ফুটে উঠল। আমাদের জাতীয় গ্লানি যে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারিনি, বরং তাদেরকে পুরস্কৃত করেছি ও পূনর্বাসিত করেছি। সেমিনারে একজন গবেষক বললেন, যুদ্ধাপরাধী রাজাকার প্রধানমন্ত্রী হয়েছে, রাস্ট্রপতি হয়েছে সামরিক সরকারের আমলে। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনেকটা নিষিদ্ধ করেই রাখা হয়েছিল। আমরা বারবার ভুলে যাই, দেশদ্রোহী আর যা-ই হোক, দেশপ্রেমী কখনও হয় না।

বাংলাদেশের জেনোসাইড নিয়ে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের নিউজার্সী অঙ্গরাজ্যের কীন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ১৯৭১ সেমিনার হলো ডিসেম্বরের ৯ তারিখে। গণহত্যা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী দেওয়া হচ্ছে। তাতে যোগ হচ্ছে বাংলাদেশের ১৯৭১-এর গণহত্যার বিষয়টি। গতকাল ছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি। কীন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশে ১৯৭১-এর গণহত্যা নিয়ে গ্রাজুয়েট কোস ওয়ার্ক সকল মুক্তিযুদ্ধের মননের মানুষকে গভীরভাবে আলোড়িত করে আসছিল। ৭১ নিয়ে স্বপ্নের বুনন তাহলে বাস্তব হচ্ছে। ১৯৭১, মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা, নির্যাতন, যুদ্ধাপরাধ, বিচার- এসব বিষয় যখন আমাদের সার্বিক জীবনধারায় বেদনাদায়কভাবে উপেক্ষিত তখন ভিন মার্কিন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে এধরণের যুগান্তকারী পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে নতুন প্রজন্মের কিছু সচেতন সাহসী যোদ্ধা। এরা কয়েকজন ব্যক্তিগত উদ্যোগে কীন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে দেখিয়েছেন ১৯৭১-এর গণহত্যার ব্যাপকতা ও গভীরতা। তাদের ভাবনার ফসল গতকালের সেমিনার। নিউজার্সীতে প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা ড: নুরুন্নবী তাদের উদ্যোগের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। জড়ো করতে সাহায্য করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের আর শহীদ পরিবারের স্বজনদের। ৭১-এর চেতনা তাড়িত একটি ভাবনার সফল ও প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পাচ্ছে কীন বিশ্ববিদ্যালয়ে।

১৯৭১ কোন বিবর্ণ স্মৃতি নয়। সময়ের ও অবস্থানগত ব্যবধানে ১৯৭১ কে ব্যবচ্ছেদ করা যায় না। শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দীন হোসেনের ছেলেরা যখন অশ্রুসিক্ত কন্ঠে ভোররাতে তাদের বাবাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছিলেন তখন শহীদ সিরাজউদ্দীন আবারও ফিরে এলেন প্রবলভাবে। শাহীন শাহ মনে করিয়ে দিলেন তার ভাই জহির রায়হান আর শহীদউল্লাহ কায়সারের কথা। সিলেট মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডা: শামসউদ্দীন ভেবেছিলেন হাসপতালে কর্মরত অবস্থায় তাকে কেউ ক্ষতি করবে না। জেনেভা কনভেনশন আর মানবাধিকার কনভেনশন বর্বর হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করেনি ড: জিয়া আহমেদের বাবাকে। সিলেট হাসপাতালের পাশে নিমর্মভাবে তার সহকর্মীদের সাথে কর্মরত অবস্থায় শহীদ হলেন। একইভাবে শহীদ মেজর হাসিবের কন্যা তার ৭ বছরের স্মৃতির পাতা থেকে নিয়ে এলেন শেষবারের মতো দেখা তার বাবার মুখটির কথা। একইভাবে চট্রগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের সার্জন ডা: আশরাফ আলী তালুকদারকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে হত্যা করা হয়। বাবার মৃত্যুর সাক্ষী তখনকার মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ড: মাসুদুল হাসানও গুলিতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিলেন। রাস্তার পাশে ফেলে রাখা বাবার মৃতদেহের পাশ থেকে উদ্ধার পাওয়া আহত ড: মাসুদুল হাসানের রক্তক্ষরণ এখনও হচ্ছে। আরও অনেকের স্বজন হারাবার কস্টের চিত্র শব্দে ধারণ করা সম্ভব নয়। কথা দিচ্ছি, বন্ধুবর মূল ডকুমেন্টটি পাঠালে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

এসব কস্ট, বেদনা আর যন্ত্রণার মধ্য থেকে নিস্ক্রান্তির একমাত্র পন্থা: যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। ১৯৭১এর চেতনাকে আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আমাদের জাতীয় জীবনে মূলমন্ত্র হিসেবে ফিরিয়ে আনার খুব দরকার। শোষণমুক্ত, ধর্মনিরপেক্ষ আর গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের কোন বিকল্প নেই। স্বৈরাচারের হাত ধরেই পূনর্বাসিত হয়েছে যুদ্ধাপরাধীরা। খেয়াল রাখতে হবে, স্বৈরাচার যাতে আবারও ছদ্মবেশে নতুন করে ফিরে আসতে না পারে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আমাদের আন্দোলন আরও বেগবান হোক। তাদের বিচার হোক আগামীকালের বাস্তবতা । এই আহবান থেকে সরে আসব কিভাবে? তিরিশ লাখ শহীদ আর তাদের স্বজনরা আবারও স্মরণ করিয়ে দিল, ১৯৭১ শেষ হয়নি। যুদ্ধ চলছে। রক্তক্ষরণ হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন তাড়িত চেতনায় উদ্ভাসিত নতুন প্রজন্ম অপেক্ষা করছে বিজয়ের পতাকা হাতে। তাদের বিজয় মিছিলে যোগ দিতে হলে ঠিক এক্ষুণি এগিয়ে আসুন দৃপ্তপদে।

Saturday, October 27, 2007

জামাতী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার

যুদ্ধাপরাধী রাজাকার জামাতীদের বিচার হয়নি বলে তারা যে বিচারের উর্ধ্বে নয় তা প্রমাণের এতোটা উপযুক্ত সময় আগে কখনও আসেনি। গতকাল রাজাকার মুজাহিদ যে বক্তব্য রেখেছেন তার পেছনে যে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির প্রচ্ছন্ন পৃষ্ঠপোষকতা আছে তা আংগুল দিয়ে দেখাবার কোন প্রয়োজন নেই। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৩৬ বছর পর রাজাকার-আলবদর যুদ্ধাপরাধী তাদের ছানাপোনাদের আচরণ এখন নেক বেশী উদ্ধত। এতে হতাশ হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। অন্তত: মুজাহিদ যে খোলা চ্যালেঞ্জ দিয়ে দিলেন তার দাঁত ভাংগা জবাব দেয়ার সময় এসেছে।

তিরিশ লাখ লোক প্রাণ দিল আর তার বিনিময়ে রাজাকার-জামাতীরা ইসলামের পসরা সেজে জাতীয়তাবাদীদের ঘাড়ে শাখামৃগের মতো আরোহন করে দেশরক্ষার মায়াকান্না দিয়ে যাচ্ছে। কখনও একবারও শুনবেন না এদের মুখ থেকে যে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এরা। জামাতীরা যখন এদেশের মা-বোনকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর পায়ে ইয়ানত হিসেবে তুলে দিয়ে দেশসেবা করেছিল। নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল নিরপরাধ মানুষদের। কোন অনুশোচনা নেই এই পশুপোষ্যদের মুখে। কি ভয়াবহ নির্বিকার অনুভূতি। কি নির্লজ্জতা।

জিয়ার সামরিক সরকার বৈধতার সন্ধানে ইসলামী জাতীয়তাবাদী থিওরী প্রবর্তন করার সুবাদে সকল নিমকহারাম যুদ্ধাপরাধী রাজাকাররা হয়ে গেল দেশপ্রেমী জাতীয়তাবাদী । পূনর্বাসিত হলো তারা। তারা কোন জনমে কোন অপরাধ করেছিল না কি? ইতিহাস বিকৃতির উৎসব চলছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রান্তিকীকরণ চলছে। হালকা করে দিতে চায় মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামী ইতিহাস। তাই, এসব রাজাকারদের ব্যাধির নিরাময় করার দরকার। দরকার আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের। সকল নিমকহারাম রাজাকার ও তাদের পোষ্যদের নিপাত না হওয়া পর্যন্ত চলুক আরেকটি যুদ্ধ। শুরু হোক তাদের মুখোশ খুলে দিয়ে তাদের আসল চেহারা তুলে ধরার। বিচারের এই দাবীকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে আজকের সচেতন প্রজন্ম যে অনেক বেশী প্রস্তুত তা আমাদের সবার মনে জন্ম দিচ্ছে নতুন প্রত্যয় ও প্রত্যাশা।

বর্তমান তত্বাবধায়ক সরকার বিএনপি-জামাত মোর্চার এক্সটেনশন তার প্রমান চোখের সামনেই আছে। ফখরুদ্দীন আহমেদ নিজে স্বাধীনতার পরও বহু বছর পাকিস্তানী সরকারের চাকরি করেছেন। মঈন আহমদে নিজে সেখানকার গ্র্যাজুয়েট। তাদের বায়োডাটাতে তা জলজল করে জ্বলছে। মঈনুল হোসেন তো নিজে জামাতীদের ব্যাপারে অন্ধ। আরেক উপদেস্টা জেনারেল মতিন তাদের সপক্ষে ক'দিন আগে সাফাই গেয়ে গেলেন। সামরিক গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম হর্তাকর্তা ক'দিন আগ পর্যন্ত ছিলেন যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের ছেলে। আর এখন যারা আছেন তাদের সাথেও জামাতীদের দহরম মহরম আছে বলে পত্র পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।

সরকার যখন দূর্নীতির গান দিয়ে রাজনীতিবিদ শিকার শুরু করলো তাতে কিন্তু জামাতীদের পশমও ধরা হয়নি। চুনোপুটি দু'য়েকজনকে শ্রীঘরে ঢুকালেও আমীররা সযতনে আছেন। চট্রগ্রামের কুখ্যাত জামাত নেতা শাহজাহান চৌধুরী কয়েক মিনিটের জন্য ফস্কে যায়, যখন অন্যদের জন্য দূর্নীতি দমন কমিশনে দুয়ার গোড়ায় যৌথ বাহিনী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে পেরেছে। জামাতের সাথে সন্ত্রাসীদের সংযোগ নিয়ে প্রামাণ্য তথ্য থাকলেও সরকার নির্বিকার। বিষয়টা বেশ স্পস্ট। ১/১১ ঘটল যখন সামরিক বাহিনী দেখল তাদের জাতীয়তাবাদী-জামাতী শিবির মুমূর্ষ অবস্থায় আছে। জামাতীদের হাত ধরে তাই নতুন জাতীয়তাবাদীরা পূনর্জন্ম লাভ করবে, ক্ষমতার দুধ ভাত খাবে। তাই, দুধ দিয়ে জামাতী সাপদের পোষা হচ্ছে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়ো ট্রাজেডী হচ্ছে রাজাকার জামাতীদের পূনর্বাসন। আর ইতিহাস সাক্ষী এটা হয়েছে পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর, তার আগে নয়। ১৯৭৫ আগে মুজাহিদ, কামরুজ্জামান, সাঈদী আর গোলাম আযম কোথায় থাকতেন? সামরিক সরকারগুলো তাদের রাজনৈতিক বৈধতার জন্য বারবার মৌলবাদ জামাতীদেরকে ব্যবহার করেছে। এখনও যদি ব্যবহার করে তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সেনাবাহিনীতে জামাতীদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব-প্রতিপত্তি দেশের স্বাধীনতা ও সংহতির জন্য বিশাল হুমকি। তাই, বর্তমান সময়েও জামাতের মুজাহিদরা আশংকায় বাস করে না। তাদের দূর্নীতি কারও চোখে পড়ে না। তাদের দলেও কোন সংস্কারের দরকার হয় না। কারণ, খুবই স্পস্ট। তারা এসব দুনিয়াবী দাবী ও ম্যান্ডেটের উর্ধ্বে বাস করে। তাদের এনজিওগুলোর কোন তদন্ত হয় না। জেএমবি'র সাথে ইসলামী ব্যাংকের লেনদেনের সম্পর্ক থাকলেও সেই তদন্ত ধামাচাপা পড়ে থাকে। দশ ট্রাক অস্ত্র পাচারের মামলাও চাপা পড়ে থাকে। অসংখ্য প্রামাণ্য তথ্য দিয়ে এই লেখার পাতা ভরে দেয়া যাবে। তবে অন্ধজনে আলো দেয়ার চেস্টা বৃথা। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা,দেশপ্রেম, সার্বভৌমত্ব- এসব প্রত্যয়গুলো গোষ্ঠীগত স্বার্থে সংরক্ষিত। জামাতী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আর মৌলবাদী অপশক্তিকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত তাদের উদ্ধত আচরণ সহ্য করতে হবে। আর যদি তাদের এই আচরণ অসহ্য মনে হয়, তাহলে আরেকটি যুদ্ধে নামতে হবে যাতে এসব যুদ্ধাপরাধীদেরকে ঝেঁটিয়ে চিরতরের জন্য বাংলার মাটি থেকে বিদায় করা যায়।

Thursday, September 06, 2007

ছায়ার সাথে যুদ্ধ:

বাংলাদেশের সামরিক সরকার কি তার নিজের ছায়ার সাথে যুদ্ধ শুরু করেছে? সরকার কি ভীত আর সন্ত্রস্ত হয়ে আছে নিজের স্বৈরাচারী ছায়া নিয়ে? বিডিআর-এর মাধ্যমে ২০০টি ওপেন মার্কেট খুলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে চৈতন্যোদয় হলো। স্বয়ং সরকার নিজে ব্যবসায়ী-দোকানদার-সওদাগরদেরকে ক্যান্টনমেন্টের পাশে বিলাসী ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে ডেকে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, "বাছারা রোজা আসছে। একটু দয়া করো। লাভ করো। অতি মুনাফা করো না"। রয়েসয়ে। ব্যবসায়ীরা গদগদ হয়ে উঠল। বলল, এ সভা আরো আগে হওয়া উচিত ছিল। যাক, বিলম্বে হলেও বোধোদয়ের জন্য শুকরিয়া। হয়রানি হবে না বলে সেনাপতি আশ্বস্ত করলেন। তার মানে, আগে হয়রানি হতো। হয়রানির কথা মুখ ফুটে বলতেও ভয়। ভয় দেখিয়ে কি আর জয় করা যায়? তাই, আজকের সভা শেষে এবার নির্ভয়ে সবাই ব্যবসাপাতিতে মন দিবে। যুদ্ধটা কি ছায়ার সাথে?

দৈনিক ইত্তেফাকে সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখের লেখা পড়ে মনে হলো, সামরিক বাহিনী সত্যি সত্যি ছায়ার সাথে যুদ্ধ শুরু করেছে। সাবধান করে দেয়া হচ্ছে অনেককে। মার্কিন মুল্লুকে বাংলাদেশ সরকারী গোয়েন্দা পাঠিয়েছে। বিদেশে প্রবাসী কারা সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে পাঁয়তারা করছে তাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য। সামরিক সরকারের মুখপাত্র মঈনুল হোসেনের পত্রিকা ইত্তেফাক ছাপিয়েছে এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি:
"এই বিশেষ মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশের একটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তিন কর্মকর্তা এরই মধ্যে নিউইয়র্কে এসে পৌঁছেছেন। গোয়েন্দারা বৈধ-অবৈধ নির্বিশেষে পেশাজীবী, রাজনীতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করছেন এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে আন্দোলনকারীদের নাম-ধাম এমনিক অভিবাসন মর্যাদা পর্যন্ত সংগ্রহ করছেন। ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায় যে, প্রাবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজনকে গোয়েন্দাদের সনাক্ত করা তেমন কোন কঠিন কাজ নয়। আন্দোলনকারীদের পুরো তথ্য-উপাত্ত, দেশের বিমান বন্দর ও নিজনিজ এলাকার থানাগুলোতে পাঠানো হবে। সূত্রটি আরো জানায় যে, জন্মসূত্রে বাংলাদেশী অথচ মার্কিন পাসপোর্টধারী কোন আন্দোলনকারীই যাতে নিস্তার না পায় সে লক্ষ্যে তাদের প্রতিকৃতি ও ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সরবরাহ করা হবে। এছাড়া প্রবাস থেকে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার নামে যারা কোন প্রকার পারিশ্রমিক ছাড়া দেশের পত্র-পত্রিকায় ভিত্তিহীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ পরিবেশন করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত রয়েছে তাদের নাড়ী নক্ষত্রেরও খোঁজ নেয়া হচ্ছে..."।
না, ইত্তেফাককে বাহবা দেওয়ার কিছু নেই। ক্যান্টনমেন্টের দোর্দন্ড প্রতাপের এই সময়ে তারা যে দু:সাহস দেখাননি, তা কি মুখ ফুটে বলতে হবে? যেমন খসড়া দেয়া হয়েছে, তেমনটা লেখা হয়েছে পত্রিকার পাতায়। এধরণের প্রতিবেদন দিয়ে সরকার কাকে ভয় দেখাতে চায়? যারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাত করেছে তাদেরকে, না যারা গণতন্ত্র ও নির্বাচিত সরকারের প্রত্যাবর্তন দেখতে চায় তাদেরকে? প্রতিবেদনটি ইংরেজী পত্রিকায় উঠেনি। উঠলে ভাল হতো। তবে ইত্তেফাকে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যে হয়রানি করার আর চোখ রাঙ্গানোর অশনি ও অশুভ সংকেত তা কি বলার দরকার আছে? বড়োই দুর্ভাগা জাতি। বারবার এখানে জনগণকে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয়। তাতে অশুভ শক্তি পিছু হটে, রং আর ভোল পাল্টায়। ট্রাক থেকে সহাস্যে গোলাপ ফুলের শুভেচ্ছা নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে ফিরে যায়। নব্বইয়ের এপিসোড আবারও কি দেখা যাবে আঠারো বছর পরে?

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্দেশ্য সৎ ছিল। নিরপেক্ষ নির্বাচন আর দুর্নীতির বিরোধী কার্যক্রম শেষাবধি নতুন রাজনৈতিক দল তৈরীর ফন্দিবাজিতে গিয়ে ঠেকল। এধরণের ধান্ধাবাজির কি কোন দরকার ছিল? নতুন পদলেহীরা সহাস্যে রাজনীতির দাবার ঘুঁটি চালছে। তবে জনগণ যে ক্রমশ:ই বুঝতে পারছে সামরিক বাহিনীর ধান্ধা কি? সব দূর্নীতির হিসেব বেরোচ্ছে, সামরিক বাহিনীতে ডিফেন্স পার্চেজের দূর্নীতির শ্বেতপত্র কি বের হবে? তারা কি ধোয়া তুলসী পাতা? হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যায়, তার খবর কে রাখে? নির্বাচন কমিশনের অন্যতম সদস্য একজন অব: জেনারেল পার্বত্য এলাকার জন্য বরাদ্দ গম লোপাট করে বাধ্যতামূলক অবসরে গিয়েছিলেন, সেই কথা অনেকেরই অজানা না। ছোট উদাহরণ। দরিদ্র বাংলাদেশের দু লক্ষ সামরিক সদস্যের জন্য বিলাস বহুল চোখ ধাঁধানো ক্যান্টনমেন্ট তৈরী না করে ১৫ কোটি মানুষকে এই ক্যান্টনমেন্টের বাসিন্দা করার দরকার। চলমান সংস্কারের জোয়ারে সামরিক বাহিনী কেন বাদ পড়বে? বের হোক শ্বেতপত্র সামরিক বাহিনীর পেছনে ব্যয় বরাদ্দ কতো? এর বাইরে বেসামরিক বাজেট থেকে কতোটা লুটেপুটে নেওয়া হয়? ডিফেন্স বাজেটের নামে কতোটা লুটপাট হয়? বাংলাদেশ কার সাথে যুদ্ধ করবে? নিজের ছায়ার সাথে? এখন যুদ্ধ শুরু হয়েছে নিজের ছায়ার সাথে।

জনগণের শক্তি কখনও বন্দুকের নলের কাছে হার মানে না। তা হলে পাকিস্তান বাহিনী এখনও শাসন করে যেত অখন্ড পাকিস্তানে। লেজেহোমো এরশাদ বসে থাকতো ক্ষমতার মসনদে। একসময় পাকিস্তানী বাহিনী আর তাদের পদলেহীরা বলতো পাকিস্তান বাঁচলে ইসলাম বাঁচবে। এখন আবার একই প্রতিধ্বনি শুনি। সামরিক বাহিনী আর দেশের অস্তিত্ব একাকার হয়ে গেছে। স্বৈরাচারের নখর দেখা যায়? ব্যয়বহুল নেইল ওয়ার্ক দিয়ে কি তা ঢাকা যায়? বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ছাত্র, সাংবাদিক আর সাধারণ জনতাকে যেভাবে অপদস্থ ও মিথ্যে বানোয়াট মামলায় জিম্মি করা হয়েছে তা কি পাকিস্তানী শাসকদের অপচ্ছায়া নয়? সত্য কি আর চাপা রাখা যায়? দেশের জনগণকে ঠেঙ্গিয়ে এখন বিদেশ বিভুঁইয়ে ভয় দেখানো শুরু হয়েছে? সামরিক সরকার ভয় কাকে পাচ্ছে? জনগণকে, না নিজের ছায়াকে?

Wednesday, August 22, 2007

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বিবিসির আপডেট


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্ফোরন্মুখ ঘটনায় সেনা বাহিনী পিছু হটেছে। ক্যাম্পাস থেকে সেনা বাহিনী তাদের ছাউনি গুটিয়ে নিয়েছে আজ ভোর পাঁচটার মধ্যে। ছাত্রদের উপর সেনা বাহিনী ও পুলিশের নির্যাতনের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে ছাত্র জনতা। বিবিসি বাংলা এব্যাপারে চমতকার নিউজ কাভারেজ ও বিশ্লেষণ দিয়েছে। ছাত্রদের সাথে যোগ দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ করার আহবান জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি। রাজনৈতিক অধিকার ও দ্রুত নির্বাচনের দাবী জানানো হয়েছে। জেগে উঠুক ছাত্র জনতা। আবারও উড়ুক গণতন্ত্রের বিজয় কেতন। নির্বাসিত হোক সামরিক কর্তৃত্ব ও স্বৈরাচার। তাহলে আজ সকালে প্রচারিত প্রায় ১৫ মিনিটের বিবিসির নিউজ কাভারেজ শুনুন এখানে:

Get this widget Share Track details

Friday, August 17, 2007

তুমি রবে সংগ্রামে

ভিডিওটি এনওয়াই বাংলার সৌজন্যে:

বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে আমার দেখা সেরা অনলাইন ভিডিও। জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করল ঘাতকরা। এখনও তারা তাদের প্রাপ্য শাস্তি পায়নি। ঘাতকরা বিভিন্ন সময়ে পুরস্কৃত হয়েছে। বিচারের বাণী আর কতোকাল নীরবে নিভৃতে কাঁদবে? দেখুন তাহলে ভিডিওটি:





Print Page

Monday, August 06, 2007

রাস্ট্রপতি, আর্মী আর বন্যা:

(একই সাথে দেশীভয়েসে প্রকাশিত)
দেশে চলছে ভয়াবহ বন্যা। দেশের এই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে গতকাল রাস্ট্রপতি সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে হাজির হয়ে জেনারেলদেরকে গণতন্ত্রের প্রহরী হিসেবে প্রত্যয়ন দেওয়ার কারণ কি? এই মূহুর্ত্তে সেনাবাহিনীর দায়বদ্ধতাকে স্মরণ করিয়ে তাদের প্রশস্তি দেওয়ার কোন যুক্তি নেই। রাস্ট্রপতি বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কথা না বলে সশস্ত্র বাহিনীর ১১ই জানুয়ারীর অবদানকে দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাইলেন। সেনাবাহিনীর অবদান নিয়ে কারো মধ্যে প্রশ্ন নেই, তবে হঠাৎ করে সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে হেডলাইন করার যৌক্তিকতা বেশ অবান্তর মনে হলো। পাশাপাশি বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা ও দূর্দশাগ্রস্থ লোকদের দুর্ভোগের চিত্র আবারও স্মরণ করিয়ে দিল, সরকারী পদক্ষেপের অপ্রতুলতা। বানভাসি লোকগুলো সাহায্য পাচ্ছে না আর বন্যার বিষয় বাদ দিয়ে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে রাস্ট্রপতির প্রশস্তি পর্যবেক্ষকদের মনে বেশ অযাচিত ঔৎসুক্যের উদ্রেক ঘটাবে। তাহলে গতকালের টিভি সংবাদ থেকে নেওয়া অংশটুকুতেই দেখুন "রাস্ট্রপতি, আর্মী আর বন্যা":

Sunday, August 05, 2007

মামা, পাবলিক ঘুমায় কেন?


যারা আমার ভাগ্নেকে চেনেন না, তাদেরকে বলছি আমার সবে ধন নীল মনি ভাগ্নে আমার বাসার সবচেয়ে সচল মানুষ। কথার খই তার মুখে ফুটবে দিন রাত। মাঝে মাঝে ভাবি, রাতে কি সে ঘুমায়? ঘুমেও বোধ হয় কথা বলে। ছুটির দিনে সকাল সকাল ঘূম থেকে তুলে দিয়ে তার দিনের যাত্রা শুরু করলো। রুমে হুটহাট করে ঢুকেই বলে উঠল, পাবলিক এতো ঘুমায় কেন? আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম, "এই বেকুব বাজে তো সকাল সাতটা। ছুটির দিন একটু ঘুমাই"। এই বার বলে উঠল, "না মামা, তোমাকে বলছি না। তুমি তো ২৪ ঘন্টাই জেগে থাক, বলছি পাবলিককে"। পাবলিক নিয়ে তার অতি উৎসাহ দেখে বললাম, "পাবলিক কি করবে? এমনিতেই ঝড় ঝঞ্চা চলছে, যতো ঘুমায় ততই ভাল"। না, মামা। তুমি কিছুই বুঝ না, ভাগ্নের বোদ্ধা উত্তর। গতকাল গেলাম র‌্যাংগস ভবন ভাংগা দেখতে। পাবলিকের ভীঁড় নেই। বন্যা আসল। লোকজন ত্রাণ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করবে, তারও কোন খবর নেই। পাড়ায় পাড়ায় চান্দা নিবে, না কোন আওয়াজ নেই। এমনকি স্বয়ং সেনাবাহিনী একদিনের বেতন নিয়ে হাজির হলো, তাতেও দেখি পাবলিকের ঘুম ভাংগে না"।

এবার একটু নড়চড়ে উঠে বিছানায় বসলাম। ভাগ্নে আমার স্মার্ট। হাতে এক কাপ চা। আহা, তাজা এক কাপ চা। বেড টি। এরকম ভাগ্নে যার আছে তার যে কি সৌভাগ্য। শুধু হাতের কাছে ডাক্ট টেপ রাখার দরকার। যখন বেশী কথা উতরায়, তখন খালি মুখে মেরে দিলেই হবে। হাতে চা নিয়ে চুমুক দিয়ে ভাগ্নের সহাস্য বদনের দিকে তাকালাম। ভাগ্নে জানে, মামাকে কি দিয়ে কাইত করা যায়। মনে মনে বলি, অনেক বড়ো হও মামা। এবার আমি ভাগ্নের দিকে তাকিয়ে বললাম, মামা র‌্যাংগস ভবন তড়িঘড়ি করে ভেংগে কড়িৎকর্মা সরকার দেখাল, "তারা পারে"। র‌্যাংগস ভবন ২৪ ঘন্টার কম সময়ে ভেংগে তার প্রমান করলো, বিলম্বেই বিপদ। এছাড়া মানুষের মন, কখন কোন দিকে যায়? ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি আবার ম্যানেজ করে ২২ তলা দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে লজ্জা না? তাই, সরকার সেই চান্স নিতে চাইল না। এছাড়া, মানুষের জিনিস পত্র সরিয়ে নিতে আরেকটু সময় দিলে তো নাটক জমে না। হনুমানের বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। ২২ তলা পাহাড় মাথায় নিয়ে পাবলিকের মুখে হাসি ফুটাতে চাইল। কিন্তু তারপরও পাবলিক ঘুমায় কেন?

মামা, "বন্যার কি হবে"? ভাগ্নের উৎকন্ঠা। পাবলিক যদি ঘুমায় তা হলে কেমনে কি হবে? আরে বেকুব, পাবলিক কি করবে। পাবলিকরে নেতারা শিখিয়েছে, আল্লাহর জিনিস আল্লাহ নিবে। এটা নিয়ে বলার কি আছে? তাই, পাবলিক দেখছে, আল্লাহর রহমতের পানি দিয়েছে। পুরো দেশের আধেকটা রহমতে ভাসছে। বাকী অর্ধেকটা ছুই ছুই করছে। এসব উপরওয়ালার ইচ্ছা। উপরওয়ালা বলল, "হায়রে হনুমান, দেশ সেবা করবি। নে, বানের পানি দিলাম। এবার পাবলিকের সেবা কর"। আর পাবলিক বলে, এই দেশের জন্মের ৫ বছর থেকেই তো সেবা করে আসছে খাকীর দল। পরিণতি জানা। তাই, যা করার করো। বন্দুকের নল দিয়ে দেশ রক্ষা করা যায়, দেশ স্বাধীন করা যায়, শত্রুকে দমন করা যায়। কিন্তু মানুষের মন জয় করা যায় না। এই সহজ কথা কি আর হনুমানের দল বুঝে? তাই, পাবলিক এখন ঘুমায়।

ভাগ্নে আমার লেকচারে বিরক্ত। বলল, "মামা, তুমি কিছুই জান না। আমার কলেজের সুমনার দিকে তাকানোই যায় না"। র‌্যাংগস ভবন, বন্যা, তারপর সুমনা? কিছুই বুঝলাম না। সব তালগোল পাকিয়ে গেল? অবাক হয়ে বললাম, "সুমনার আবার কি হলো"? আহা, মামা বড়োই দু:খের কথা। সুমনা কলেজে নতুন নতুন মডেলের গাড়ী নিয়ে আসতো। কতো ফুটানি দেখাতো। এখন সুমনার বাসে করে আসারও জো নেই। সর্বস্ব খুইয়েছে দুদকের কাছে। বাবা ফেরারি। গাড়ী থানায়। চোখ থাকে ছলছল। খুব মায়া লাগে। আমি ভাগ্নের দিকে হাতজোড় করে বললম, "দয়া করে মায়া দেখিয়ে সুমনাকে আমার বাড়ীতে নিয়ে এসো না। শেষে দুদক আমার পেছনে লাগবে"। ভাগ্নের ধান্ধার হিসেব কি তা বুঝার চেস্টা করলাম।

সুমনার ব্যাপারটা নিয়ে নাড়াচাড়া না করে বললাম, "পাবলিকের টাকা কই? সব একাউন্ট ফ্রীজ করে রাখা হয়েছে"। তাই, পাবলিক টাকার থলি নিয়ে এখন আর ফখরু চাচার কাছে যাবে কিভাবে? রাজনৈতিক নেতারা আপন প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত। "সেই দিন কি আর আছে? দিন বদলাইছে না"- তাই পাবলিক কাঁথা বালিশ নিয়ে ঘুমায় আর বায়োস্কোপ দেখে। আর হনুমানের দল ভাবছে, "স্যার এভরিথিং আন্ডার কন্ট্রোল"। তবে বানভাসি লোকজন যখন আশ্রয়ের সন্ধানে শহরের দিকে ছুটবে তখন কি ক্যান্টনমেন্টে তাবু খাটাবার মতো জায়গা থাকবে তো?


Print Page

Wednesday, August 01, 2007

শেয়ালের খোঁয়ারে গণতন্ত্রের ইনকিউবেটর


লিবারেল আর্টস ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্র হয়ে বিজ্ঞান নিয়ে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। নিজের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা দেখে নিজেই লজ্জিত হয়ে পড়ি। তাই আমার মন বিজ্ঞানমনস্ক না হয়ে বিজ্ঞানভীত হয়ে উঠে। আশেপাশে বোদ্ধা মানুষের দল যখন জ্ঞান-বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলেন তখন তাদেরকে সমীহ করে চলি। শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে উঠে। ছোট বেলায় স্কুলে থাকতে একবার বিজ্ঞান ল্যাবে ট্যুর করার কথা হুট করে মনে পড়ল। চোখ আটকে থাকল ডিম তা দেওয়ার ইনকিউবেটরের দিকে। বড্ডো রহস্যময় মনে হলো। কি অবাক ব্যাপার!! মুরগীকে কতো কস্ট করে ডিমে তা দিতে হয়। ছোটবেলায় অপেক্ষায় থাকতাম কখন বাচ্চাগুলো ফুটবে। তারপর ফুটফুটে তুলতুলে বাচ্চাগুলো ডিমের খোসা থেকে বের হয়ে আমাদের হাতের তালুতে বড়ো হতে থাকতো। আমরা সবাই কতো না নাম দিতাম এই তুলতুলে বাচ্চাদেরকে। বড্ডো আদরের। তাই, ইনকিউবটর দেখে আমার সেই অল্পবয়সী মনে প্রশ্ন উঁকি দিলো, “আহারে এতোগুলো ছোট বাচ্চাকে কে যত্ন করবে”? এরা পাবে না মায়ের আদর। দু’দিকে ডানার মধ্যে তুলতুলে পশমে মাথা গুঁজে চোখ বন্ধ করে স্বস্তি পাবে না। ইনকিউবেটরের বদ্ধ হাওয়ায় জন্ম নিয়ে এদেরকে বড়ো করা হবে খাদকদের উদরপূর্তির জন্য। ইনকিউবেটরকে নৃশংস মনে হয়েছিল। হঠাৎ করে এতোদিন পর এই পড়তি বয়সে আবার ইনিকউবেটরের কথা মনে পড়ে গেল।

দেশীয় মুরগীর ডিমান্ড বড্ডো কম। ফার্মের মুরগীর যোগান বেশী। কারণ, এতে মুনাফা বেশী। তাই, পোলট্রি ফার্মের ব্যবসায়িক বুদ্ধিটি দেশের সামরিক সরকার রপ্ত করে নিতে বিলম্ব করেনি। ১৯৭৫ সাল থেকেই তো এদেশের সামরিক বাহিনী গণতন্ত্রের বাচ্চা সেনাছাউনির ইনকিউবেটরে জন্ম দিয়েছে। তাতে নাদুশ নুদুশ ছানা বেরিয়েছে অনেক। তাদের সৎকার করে সেনাপ্রধান জিয়া আর এরশাদ গনতন্ত্রকে সংহত করেছেন। এখন ২০০৭। ইনকিউবেটর প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে। যোগ দিয়েছে এটমিক ঘড়ি। তাতে সময়ের হিসেব হয় একেবারে নিঁখুত। তাই, এখন সহজেই বলা যায়, নতুন ছানার জন্ম হবে কবে? মেশিনে গরম তা দিয়ে রাখা হচ্ছে। দিনক্ষণ ঠিক করে নব ঘুরিয়ে তাপমাত্রা বাড়িয়ে কমিয়ে যথাসময়ে আবার এক দল নতুন ছানা ইনকিউবেটর থেকে বেরিয়ে দাঁত কেলিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে। আমরা নিরীহ পাবলিক। জ্ঞান বিজ্ঞান বুঝি না। প্রযুক্তি বুঝি না। অংকের হিসেব বুঝি না। আমরা খোসা ভেংগে বেরিয়ে আসা ডিমের বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে চোখ গোল করে বলব, “খাসা হয়েছে”। দেশী বিদেশী এডভাইজাররা কোরাস গেয়ে বলবেন, “বাচ্চাগুলো সুস্থ। প্রবৃদ্ধির সমূহ সম্ভাবনা। মুক্তি এবার হবে। স্বয়ম্ভরতা আসবে”। দিকে দিকে মোসাহেবের দল চোঙ্গা মাইক দিয়ে প্রশস্তি গাইবে। তাদেরকেও সিস্টেমে নিয়ে আসা হয়েছে। পাবলিক কি জানে, শেয়ালের খোঁয়ারে গণতন্ত্রের ইনকিউবেটরে নতুন ছানাদের পরিণতি কি হবে? দু:খজনক হলেও সত্য, পাহারাদার শেয়ালের প্রশস্ত হাসিতে আমরা সবসময়ই উষ্ণতা ও আস্বস্তি খুঁজে বেড়াই!!!

Tuesday, July 31, 2007

৭১'এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার:

আজকের বিবিসির সকালের অনুষ্ঠানে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহবায়ক শাহরিয়ার কবির এক সাক্ষাৎকারে জানান, মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের বিচার বিভাগ বাংলাদেশের ৭১'এর ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে আশ্রয় গ্রহণকারী যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তথ্য প্রমাণ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। জনাব কবির বর্তমান সামরিক প্রধানের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাবার কথা উল্লেখ করে আশাবাদ প্রকাশ করেন যে বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে একটি কমিশন গঠন করবে। তাহলে শুনুন মূল সাক্ষাৎকার পর্বটি:
Get this widget | Share | Track details

Monday, July 30, 2007

জামাত নেতা নিজামীর একটি প্লট:


কেঁচো খুড়তে গিয়ে অনেক সময় সাপ বেরিয়ে আসে। জামাতের নেতা নিজামী বিশেষ বরাদ্দে রাজউকের প্লট পেয়েছেন। আজ ৩০শে জুলাইয়ের প্রথম আলোতে খবরটা অনেকের কাছে চমক দিলেও আমি একটুও অবাক হইনি। ধর্ম ব্যবসায়ী দলের প্রধান জামাত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর একটা প্লটের খবর অতি সামান্য ব্যাপার। যে দেশে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির বাণিজ্য চলেছে তাতে ৫ কাঠার বনানীর প্লট নস্যি মাত্র। নিজামী-মুজাহিদ ইনক্ জামাতের লেবাসে সমাজ কল্যাণ আর শিল্প মন্ত্রণালয়ে যে অশুভ জামাতী প্রভাব প্রতিপত্তির চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে গেছে তার হিসেব কষবে কে? তেজগাঁও শিল্প এলাকার কোটি কোটি টাকার মূল্যের জমি নাম মাত্র মূল্যে তিনি দান করেছেন সেই ঘটনা এখন কি আর কারও মনে আছে? শিল্প মন্ত্রীর ভাগ্নে মামার সুপারিশ কব্জা করে লোহা লক্কর ব্যবাসায়ী মিজানুর রহমানের ২৫ লাখ টাকা লোপাট করে দিয়েছে সেই খবর ক'জনে মনে রাখবে। বরং সদাশয় সরকার একজন রাজাকার ঘাতক নিজামীর জন্য সহানুভূতির বন্যা বইয়ে দিবে। নিজামীর কুকর্মের শ্বেত পত্র কেউ দেখবে না, দুদকেও কোন মামলা উঠবে না। এভাবেই পার পেয়ে গেছে যুদ্ধাপরাধী ঘাতকের দল। সামনের দিকেও পার পেয়ে যাবে।

গত ৪০ বছরে নিজামী কোন বাড়ীর মালিক হতে পারেননি বলে বিএনপির বদান্যতায় নিজামী প্লট পেয়েছেন। সেখানে এই দুর্মূল্যের বাজারে ছ'তলা বাড়ী উঠছে। প্রতি শুক্রবার তার স্ত্রী আর ছেলে গিয়ে দেখভাল করে আসেন। এখন রাজউক দাবী করছে, "তারা কিছু জানে না"। কারণ, তাদের দাবী, কুকর্মটি করেছে মন্ত্রণালয়। তবে এই নজরানার কারণ হিসেবে কাগজপত্রে বলা হয়েছে, "রাস্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে অবদানের জন্য নিজামীকে এই প্লট দেওয়া হলো"। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা চোখের মাথা খেয়ে চেয়ারে বসেন। উপদেস্টা ব্যরিস্টার মঈনুল হোসেন স্মরণ করতে পারেন না,
ঘাতক মুজাহিদ কে? উপদেস্টা জেনারেল মতিন ভাবতেই পারেন না, "জামাতীরা কোন দূর্নীতির সাথে জড়িত থাকতে পারে"। এভাবেই এক মঈনুল আর এক মতিনের সাফাই সাক্ষীতে কি লাখো শহীদের রক্ত রঞ্জিত নিজামী মুজাহিদরা কি রেহাই পাবে ইতিহাসের নিষ্ঠুর কাঠগড়া থেকে?

হয়তো একজন
ইমরান ফারুকের লেখায় উঠে আসবে দশ ট্রাক অস্ত্র পাচারের নেপথ্য নায়ক তদানীন্তন শিল্প মন্ত্রী নিজামীর কথা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে জাতীয় সেনশেসন তৈরী করা অনেক সহজ যখন জামাতী আমলনামা আমরা ভুলে যাই। হয়তো একজন সাজ্জাদ জহির যখন ইতিহাস ঘেঁটে জামাতীদের সাথে সামরিক বাহিনীর সংযোগের বিপজ্জনক সূত্র চোখের সামনে তুলে ধরেন তখনও কি আমরা নির্বিকার হয়ে বসে থাকতে পারি? নস্টদের হাতে সবকিছু চলে যাবে এই অপ্রিয় সত্যের মুখোমুখি না হয়ে তাকে প্রতিরোধ করার জন্য এই অভাগা জাতি আবারও গর্জে উঠবে এই প্রত্যাশা কি খুব বেশী?

Monday, July 16, 2007

দেশে সামরিক গণতন্ত্র চাই না:

এই মাত্র খবর দেখলাম শেখ হাসিনাকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হিসেব খুব সহজ। সকল দূর্নীতির হোতা জাতীয়তাবাদী দলের শীর্ষ নেতারা জেলে গেলেও খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে শেখ হাসিনাকে দিয়ে গ্রেফতার বাণিজ্য শুরু করায় নতুন করে হিসেব কষার সময় চলে এসেছে। প্রতিবাদ শুরু করতে হবে। গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন শেখ হাসিনা। কারণ, গ্রেফতারের এই নাটকীয় প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগকে নিউট্রালাইজ করার চেস্টা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের জন্ম কিন্তু সেনা ছাউনিতে হয়নি। এর শেকড় রয়েছে সাধারণ মানুষদের মধ্যে। বিএনপি বদলে হয়েছিল জাতীয় পার্টি। আবার জাতীয়তার ছাউনিতে ফিরে এসেছে। এখন আবার শুরু হয়েছে জাতীয় সরকারের জল্পনা কল্পনা। কিন্তু মানুষ কি আর এতোই বোকা? সামরিক শাসন বাংলাদেশে নতুন মোড়কে আনা অতো সোজা হবে না। জনগণ ঠিকই বুঝে। প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মাধ্যমে জনগণ ঠিকই সমুচিত জবাব দেবে।

তাই দেরী করার আগেই বলুন, নিয়ন্ত্রিত ও সেনা ছাউনির প্রবর্তিত গণতন্ত্র চাই না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছে তার বাইরে রাজনীতির নতুন মোড়ক দেওয়ার চেস্টা প্রতিরোধ আমরা করব। খুলে দেব সকল ষড়যন্ত্রের মুখোশ। শুরু হোক প্রতিবাদ। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের এই দুর্দশার পেছনে সামরিক বাহিনীর অযাচিত হস্তক্ষেপ সবসময়ই মূল কারণ ছিল। তাই আজকের সংকটের জন্য তারা কি দায় এড়াতে পারবে? কিছুক্ষণ আগে মতিয়া চৌধুরী ঠিকই বলেছেন, সংস্কারবাদীদের কোণঠাসা ভাব থেকে উতক্রান্তির জন্যই শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর এটা যে তাদের হাঁটুতে নামা বুদ্ধির কারণেই হয়েছে তা কি আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে হবে? শেখ হাসিনাকে দেশে আসতে বাধা আর লোক দেখানো হাস্যকর মামলার বহর দেখে তাদের বুদ্ধির তারিফ না করে কি পারা যায়? সাধু সাবধান। সামরিক বাহিনীর বিষক্রিয়া কি হয় তার উৎকৃস্ট উদাহরণ পাকিস্তান। বাংলাদেশে পাকিস্তানী নাটকের পুনরাবৃত্তির দরকার নেই। কারণ, বাংলাদেশ পাকিস্তান নয়। তাই এখনই সমস্বরে বলুন: সামরিক ছাউনির নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র চাই না। সংলাপের মাধ্যমে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে সামরিক বাহিনী ব্যারাকে ফিরুক। জনগণ ক্ষেপলে ক্ষমতালোভীদের কপালে ঝাঁটার আশীর্বাদ পড়বে। নব্বই ফিরবে ২০০৭-এ।

শেখ হাসিনা গ্রেফতার?

বাংলাদেশে সকাল ৭:৫১ মিনিট। গত রাত থেকে এখানে গুঞ্জন উঠেছিল যে আজ শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হবে। সকল দূর্নীতির জন্য জাতীয়তাবাদী দলের নেতারা জেলে গেলেও খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে শেখ হাসিনাকে দিয়ে গ্রেফতার শুরু হওয়ার খবর পর্যব্ক্ষকদের মধ্যে বেশ আগ্রহ সৃস্টি করেছে। দেশী ভয়েসে এ ব্যাপারে ব্রেকিং নিউজ ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছে। এছাড়া, বিবিসির সকালের প্রতিবেদনটি এখানে শুনতে পাবেন:
Get this widget Share Track details

Wednesday, July 04, 2007

এনটিভির বন্দনা:


এনটিভির জন্মদিন নিয়ে বেশ ভাল প্রোগ্রাম চলছে। চলছে ঈর্ষপরায়ণদের ভাষায় "পিঠ চুলকানি"। চার বছরে দর্শকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে এনটিভি। গুণগত মান চমৎকার। নাটকের মান আরও ভাল। ছবির কোয়ালিটিও ভাল। ভাল জিনিসের কদর আছে। পাবলিক এনটিভির জন্ম বৃত্তান্ত জানতে চায় না। তারা ভাল অনুষ্ঠান দেখতে চায়। টাকা খরচ করেছে এনটিভি। বিএনপি সরকারের হিরো ফালু মিয়ার সন্তান এনটিভি। পয়সা খরচ করে ভাল যন্ত্রপাতি, কারিগর জোগাড় করেছে। পাবলিককে মুগ্ধ ও সম্মোহিত করে রাখার জন্য ভাল বায়োস্কোপের চাহিদা সবসময়ই বেশী। গুঁড়ের লোভে সব পিপড়া, মাছি, আর প্রজাপতিরা লাইন ধরে আগায়। এতে দোষের কিছু নেই। টাকার জাত নেই। যার হাতে থাকে সেই শাহেনশাহ। টাকার গন্ধে এনটিভিতে সবাই ভীঁড় জমায়। অনুষ্ঠানের চমক বাড়ে। বাহবা বাড়ে। দর্শক কাড়ে।

গতকাল ছিল জন্মদিন। জমকালো উৎসব চলছে। দেখলাম, জন্মদিনে কিভাবে সবাই লাইন ধরে এনটিভির বন্দনা গাইছে। পাবলিকের দোষ কি? কারণ, আমরা পাবলিক চিরকালই ভিক্টিম। আমরা দেখি। দেখেই আনন্দ পাই। যা পাই, তাতেই সন্তুষ্ট থাকি। কাচ্চি বিরিয়ানী প্লেটে আসলে আমরা কি জিগ্যেস করি, বিরিয়ানীর মাংস কি জিন্দা ছাগলের না মরা ছাগলের ছিল? দরকার নেই। কারণ, ধরেই নেই মেজবান দেখে শুনে ভাল ম্যাৎকার করা স্বাস্থ্যবান ছাগলের মাংসই পরিবেশন করছে। এনটিভির জন্মদিনে সেই একই কথা মনে পড়ল। আমরা পাবলিক, এনটিভি পেয়েছি। আমরা পরিবেশিত বিরিয়ানীতে ছাগলের মাংসের খবর নিতে যাই না। এনটিভির জন্ম ফালুর অবৈধ টাকার পাহাড়ে। ফালু জেলে। এনটিভি তো বায়োস্কোপ। এনটিভিকে জেলে নেওয়া যায় না। বায়োস্কোপ হাত ঘুরে। কারণ, বায়োস্কোপের দরকার আছে।

সামরিক বাহিনীর বন্দনামূলক প্রামাণ্য অনুষ্ঠানগুলো এনটিভি ঘটা করে প্রচার করে। দেশ ও জাতির বিবেক হবার চেস্টা করে। এনটিভির এমডি'র হামার সরকার নিয়ে গেছে। এনটিভিকে নেওয়ার দরকার নেই। ভবিষ্যতে দরকার। সুশীল, কুশীল, চোর, চামার সবাইকে একত্রিত করতে পেরেছে এনটিভি। টাকার গন্ধে অনেকেই অনেক কিছুর পেছনে থাকে। চুরির টাকা জনগণের টাকা। এনটিভি সহ সকল টিভি চ্যানেলের আর্থিক লেনদেন, অর্থের উৎস ও জোগানদাতার বিবরণ কেউ পাবলিশ করে না। সবাই গুঁড়ের সন্দেশের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত। অবৈধ টাকা, মানুষ, প্রতিষ্ঠান কিভাবে স্বাভাবিক, সুস্থ ও জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানে উত্তরিত হয় তার চমৎকার কেসস্টাডী এনটিভি। দুর্নীতির টাকা, চুরির টাকা যদি জনগণের হয়, দুদক যদি স্বচ্ছ হয়, তাহলে এনটিভি সহ সকল মিডিয়ার পোস্টমর্টেম করার দরকার। এনটিভির জন্মদিনে এর কুশীলবদের অভিনন্দন। কিন্তু জন্মদিনে তার জন্মবৃত্তান্ত মনে করিয়ে দেওয়ার খুব দরকার।

Sunday, June 17, 2007

জামাতের আমলনামা:


জামাত শিবির ১৯৭১ সালে দেশের সাথে বেঈমানী করার জন্য সবসময়ই খুব গর্ববোধ করে। কখনও কোন জামাত-শিবিরের মধ্যে কোন অনুশোচনা বা অপরাধবোধের প্রকাশ দেখবেন না, যেমন দেখবেন না ঠান্ডা মাথায় হত্যাকারী খুনীর কনফেশনে। গণহত্যা ও নৃশংসতার সাথে পাকিস্তানী ঘাতকদের সাথে আগাগোড়া সহযোগিতার জন্য বিন্দুমাত্র অপরাধবোধ যাদের মনে নেই, চিন্তায় নেই, প্রকাশে নেই, তাদের স্পর্ধা ও সাহস আমাকে বিচলিত করে না। বরং তাদের এই দৃস্টিভঙ্গী সচেতন প্রজন্মকে অবিশ্বাস্যভাবে একত্রিত করে ঘাতকদের বিচারকে তরান্বিত করবে বলে আমার বিশ্বাস ও আস্থা প্রবল হতে থাকে।

এটা কারও অজানা নয় যে, জামাত যতোই গণতন্ত্রের জন্য মায়াকান্না দেখাক না কেন তারা সবসময়ই সামরিক ও রাজনৈতিক স্বৈরাচারী শক্তির আশ্রয়ে বিকশিত হয়েছে। জামাতকে প্রতিহত করতে হলে তাদের অতীত ও বর্তমানকে সমানভাবে তুলে ধরতে হবে। তাদেরকে মোকাবেলা করতে হবে ধর্মীয়ভাবে, রাজনৈতিকভাবে ও আইনগতভাবে। ক'দিন আগে ঘাতকদের জন্য প্রমাণপঞ্জী নিয়ে পোস্টে তুলে ধরেছিলাম একটি বুকলেট। এধরণের প্রামাণ্য দলিল ও তথ্যসূত্র রাজাকার জামাত শিবিরের মুখের উপর ছুঁড়ে দিয়ে বলতে হবে কেন স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে ধর্মভিততিক রাজনীতির কোন সুযোগ নেই। ধর্ম নিয়ে তাদের বেচাকেনার হিসেব তুলে ধরতে হবে। ইসলাম ধর্ম কারও ব্যক্তিগত সম্পততি নয়, তাই ইসলাম নিয়ে দলীয় রাজনীতিরও কোন অবকাশ নেই।

জামাতের ধর্মভিততিক মুখোশ খুলে দিতে সবচেয়ে বেশী প্রামাণ্যতথ্য তুলে ধরেছে বাংলার ইসলাম ওয়েবসাইটটি। তবে রাজনৈতিকভাবে তাদের মোকাবেলার জন্য পড়ুন একাততরের ঘাতক জামাতে ইসলামীর অতীত ও বর্তমান বুকলেটটি। মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিকাশ কেন্দ্রের উদ্যোগে প্রকাশিত এই বুকলেটটি জামাতের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঘৃণ্য ভূমিকার কথা আমাদের সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয়। বইটি পড়ুন এবং প্রচার করুন। চেতনা ৭১'এর সৌজন্যে এই বুকলেটটি পিডিএফ ফরম্যাটে আপনাদের জন্য দেওয়া হলো।

এই বুকলেটটি স্বাধীনতা পূর্ব বাংলাদেশে আর স্বাধীনতার পরবর্তীতে ঘাতক জামাতীদের কার্যক্রম ও বক্তব্য প্রমাণসহ তুলে ধরেছে। ১৯৭১এর ১৪ই আগস্ট গোলাম আযম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘোষণা দেন মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের শত্রু হিসেবে। খুব গর্বের সাথে বলেছিলেন, "বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য শান্তি কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে"। দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু ঘাতকের গর্ব বিন্দুমাত্র খর্ব হয়নি। তাদের বিচারের বিষয়টি হারিয়েছে রাজনীতির ডামাডোলে। বাংলাদেশের স্থিতি, শান্তি ও সকল শহীদদের ত্যাগের ঋণশোধের জন্য রাজাকারদের বিচারের কোন বিকল্প নেই।

১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরের ১ তারিখে গোলাম আযম করাচীতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "কোন ভাল মুসলমানই তথাকথিত বাংলাদেশ আন্দোলনের সমর্থক হতে পারে না"। একই সময় ২৩শে সেপ্টেম্বর নিজামী বলেন, "যারা ইসলামকে ভালবাসে শুধুমাত্র তারাই পাকিস্তানকে ভালবাসে"। তাই স্বাধীন বাংলাদেশে এসব বেহায়ারা আবার মুসলমান হিসেবে দাবী করে নিজেদের ঈমানের সাথেই বেঈমানীর প্রমাণ দিচ্ছে। তাদের পাকিস্তানপ্রীতি বদলায়নি, শুধু বদলে গেছি আমরা এসব ঘাতকদের পাশে বসার সুযোগ করে দিয়ে। যুদ্ধাপরাধী জামাতীদের রাজনৈতিকভাবে পূনর্বাসিত করে বেঈমানী করছি তিরিশ লাখ শহীদের রক্তের সাথে।

এ কারণেই ১৯৮৬ সালের ১৪ই জানুয়ারী জামাত নেতা আব্বাস আলী খান যখন করাচীতে ঘোষণা দিয়ে আসেন, "বাংলাদেশের জনগণ এখন পাকিস্তানের সাথে তাদের বিচ্ছেদের কারণে অনুতপ্ত" তখন তার বিরুদ্ধে রাস্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ আসে না। ভুলেই গেলাম ছিয়াশি সালে কারা যেন ক্ষমতায় ছিল? অথচ সেদিনও পাকিস্তানী সিনেটর খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে। না, তারপরেও জামাত-শিবিরের মধ্যে কোন অপরাধবোধ জাগবে না।

কাওকে অনুতপ্ত করার নিষ্ফল চেস্টার জন্য এই লেখা নয়। সেই আশা বড্ডো অমূলক। ১৯৭১ সালের রাজাকার যুদ্ধাপরাধী জামাতীদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবার কোন বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্যে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের নিত্যকারের সংগ্রামের সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সম্পৃক্ত করতে হবে। মৌলবাদের বিষক্রিয়া যখন দেশকে দূষিত করছে তখন মৌলবাদী রাজনীতির ধারক-বাহক-পৃষ্ঠপোষক জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার কোন বিকল্প নেই। ঘাতক যখন আশ্রয় পায়, আর পৃষ্ঠপোষকতা পায় রাজনৈতিকভাবে ও রাস্ট্রীয়ভাবে, তখন সে স্পর্ধা তো দেখাবেই বিচারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে। কোন ক্রোধ, হিংসা বা দ্বেষ দিয়ে নয়, বরং যুদ্ধাপরাধী জামাতীদের বিচারের লক্ষ্যে সামাজিক ও আইনগত আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমেই সম্ভব তাদের এই নির্লজ্জ স্পর্ধাকে গুঁড়িয়ে দেওয়া।

Saturday, June 02, 2007

মহীউদ্দীন আপডেট

(একই সাথে আড্ডায়দেশীভয়েসে প্রকাশিত)
বঙ্গবন্ধুর অন্যতম হত্যাকারী মহীউদ্দীনের ডিপোর্টেশনের বিরুদ্ধে আপীল ক্যালিফোর্নিয়ার নবম সার্কিট কোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছে মে মাসের ২৫ তারিখে। এই মুহুর্ত্বে যখন মার্কিন ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাকে দেশে পাঠানোর কথা তখন তার পরিবারের পক্ষ থেকে কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য জোর তদবির চালানো হচ্ছে। বিচারে প্রমানিত খুনীর পক্ষে তদবির করছেন প্রাক্তন কানাডীয় মন্ত্রী। এই ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আমার চোখে পড়েনি। সরকার খুনী অপরাধী মহীউদ্দীনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে এই মুহুর্ত্বে কি পদক্ষেপ নিয়েছেন তা জানার অধিকার আমাদের সবার আছে।

এছাড়া, মার্কিন কর্তৃপক্ষকে এটা স্পস্ট করে জানাবার দরকার যে প্রমানিত ঘাতককে ফেরত না পাঠালে এটা মার্কিনীদের জন্য বাজে নজির হয়ে থাকবে। কানাডার পত্রিকায় মহীউদ্দীনের কন্যার আকুল আবেদন ছাপানো হয়েছে। অথচ সরকার কি কানাডীয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে তাকে আশ্রয় না দেওয়ার জন্য। খুনী আর ঘাতক মহীউদ্দীনকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য দরকার এ ব্যাপারে ব্যাপক জনসংযোগ। এ ব্যাপারে রহস্যজনক নীরবতা কেবল প্রশ্নের জন্ম দিবে। এর অবসান ঘটাবে না। আশা করি, মহীউদ্দীনকে অনতিবিলম্বে ফেরত এনে বিচারের সম্মুখীন করে সরকার তার শুভবুদ্ধির পরিচয় দিবে।

Thursday, May 17, 2007

জামাতীদের নোংরা কৌশল:

একমাত্র জামাতীদের পক্ষেই সম্ভব দুই নাম্বারী খবরকে হেডলাইন দেওয়া। গতকাল দৈনিক সংগ্রামের প্রথম পাতার খবর দেখে আমার চক্ষু চড়ক গাছ। ব্লগে যেমন অনেকের লেখায় আমি বিনোদন পাই, পত্রিকা হিসেবে দৈনিক সংগ্রাম নজর কাড়ে তাদের বিনোদনমূলক উপকরণের জন্য। তবে গতকালকের খবরটা নিয়ে লিখতে গিয়ে আরেকটু গবেষণা করতে শুরু করলাম। কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে এলো।

জামাতীইসলামীবাংলাদেশ নামে গুগলমেইল দিয়ে শামীম চৌধুরী নামে একজন গ্রুপে ইমেইল পোস্ট করে শেখ হাসিনার ঢাকায় প্রত্যাবর্তনে জনতার মিছিলের খবর দিয়েছেন। এতে রাজনৈতিকভাবে হেয় হয়েছে জামাতীরা। এখন তার এই প্রচারণার কারণে জামাতে ইসলামীকে তত্বাবধায়ক সরকার নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে। কি সর্বনাশ!!! যেহেতু ই-মেইলটি ইয়াহু গ্রুপে ছাড়া হয়েছে জামাতে ইসলামী ইমেইল আইডি দিয়ে। শামীম চৌধুরী কে আমি জানি না। তবে খবরটি বেশ চমকপ্রদ মনে হওয়াতে শুরু করলাম খোঁজখবর নেওয়া। ইয়াহু গ্রুপে গিয়ে দেখলাম শামীম চৌধুরীর ই-মেইল আছে তার নিজের নামে। তার লেখার সাথে সম্পর্ক নেই কোন জামাতীইসলামীবাংলাদেশ গুগলমেইল আইডির। ইয়াহু গ্রুপে ই-মেইল ছাড়লে তাতে মূল লেখকের নাম পাশেই আসে। আর কপি পেস্ট করে অন্যখান থেকে জোড়াতালি লাগালে সেটা চলে যায় মাঝখানে। হায়রে, জামাতী নির্বোধরা। চুরি যদি করতে হয়, আরেকটু বুদ্ধি খাটিয়েই করো। ইয়াহু গ্রুপটা ছেঁকে দেখলেই বুঝা যায় মৌলবাদী জামাতীদের ধান্ধা। নিজেরাই এরা নিজেদের খবর তৈরী করে। সেনশেসন তৈরী করে। নতুন কিছু না।

খবরটা দেখে একটু মজা পেলাম। ব্যাপারটা মনে করিয়ে দেয় জামাতীদের নোংরা কৌশলের কথা। শিরোনাম তৈরী করতে এদের ইয়াহু গ্রুপের স্বরচিত ই-মেইল লাগে। নিজেরা কপি পেস্ট করে ছেড়ে দিল। আর দৈনিক সংগ্রামের পাঠকরাও তা সাথে সাথে গলাধ:করণ করল। কিন্তু ব্যাপারটা বেশ মজার যে গুগল মেইল আইডি কয়েক বছর আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জিমেইল আসার পরপরই। মার্কিন মুল্লুকে নাকি গুগলমেইল দেওয়াই হয় না বলে ব্লগের আরেক কম্পু বিশেষজ্ঞ ই-মেইল করে জানালেন। খবরটা শুনে আমারও আক্কেলগুড়ুম। অন্যদিক জামাতীদের ইয়াহু গ্রুপগুলো গত ক'দিন থেকে শামীম চৌধুরীকে শিরোনাম বানিয়ে ইয়াহু গ্রুপ কাঁপিয়ে ভোদরের মতো নাচছে। এখন এই বানেয়াট ই-মেইলের কারণে যদি সরকার জামাতে ইসলামকে বন্ধ করে দেয় তাহলে ইসলামী আন্দোলনের কাফেলা কোথায় গিয়ে ঠাঁই নেবে? হঠাত জামাতে ইসলাম দেখি আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম করতে চায়। তাতে ইয়াহু গ্রুপ থেকে যদি একজন শামীম সাহেবকে পাওয়া যায়, তাহলে মন্দ কি?

সাংবাদিক বন্ধুদেরকে খোঁজ নিতে বললাম। সকাল নাগাদ ই-মেইলের মাধ্যমে জানলাম, শামীম চৌধুরী নামে একজন মার্কিন মুল্লুকে আছেন। তবে তিনি আওয়ামী লীগের কোন কর্তাব্যক্তি নন। গত বছরই তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাহী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। এখন তার নাম ভাংগিয়ে যদি জামাতের মাঠ গরম করা যায়। জেহাদী জোশ বিতরণের জন্য দরকার কিছু নাম। কিছু উড়ো খবর। কাট-পেস্ট করে খবর দিয়ে কর্মী-সাথীদের জেহাদী জোশকে চাঙ্গা করা। হায়রে নোংরা কৌশল!!! ইসলামী আন্দোলন বেচে যাদের জীবন চলে তাদের জন্যই এধরনের উড়ো খবরকে পত্রিকার শিরোনাম বানানো সম্ভব।

আওয়ামী লীগ আর বিএনপি রাজনীতির সাথে জামাতীদের চারিত্রিক ব্যবধান হচ্ছে তারা সবসময়ই কৌশলগতভাবে তাদের অবস্থানকে সংহত করে। এজন্য জামাতীদের কৃতিত্ব কখনো খাটো করা যায় না। ধর্ম দিয়ে, আবেগ দিয়ে, কৌশল দিয়ে, প্রলোভন দেখিয়ে তারা রাজনৈতিক শক্তি সংহত ও বিস্তৃত করে। ইয়াহু গ্রুপগুলোতে টোকা দিলেই বুঝা যায় তাদের শেকড়ের বিস্তৃতি। এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিরা অনেক পিছিয়ে আছে। জামাতীরা সফলভাবে তাদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে ডাহুক ইয়াহু গ্রুপ আর সোনার বাংলাদেশ ইয়াহু গ্রুপ দিয়ে। একাততরের চেতনাকে যদি সংহত করতে হয় আর জামাতী রাজাকারদের প্রতিহত করতে হয়, তাহলে এসব ইন্টারনেট গ্রুপগুলোর মৌলবাদী প্রচারণার প্রতি চোখ রাখার খুব দরকার। না হলে এরা কপি পেস্টের আশীর্বাদে নতুন জেহাদী জোশ নির্বোধদের জন্য বিতরণ করে যাবে।

Wednesday, May 16, 2007

এবার জামাতী রাজাকাররা কি বলবেন?

(বাংলা আড্ডায় পড়ে দেখুন পাঠকদের প্রতিক্রিয়াসহ)

খবরটা নজর কাড়ল। পাকিস্তানের দ্য নিউজ পত্রিকার আজকের খবর। পড়ে একটু চমকে উঠলাম। এতে পলিটিক্যাল স্ট্যান্টবাজি আছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু তারপরও পাকিস্তান যদি বিষয়টা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে তাহলে এদেশীয় যুদ্ধাপরাধী রাজাকার জামাতীরা কি বলবে? যারা কখনও ভুলেও স্বীকার করে না তাদের একাততরের গণবিরোধী ভূমিকার কথা। গণহত্যার সাথে জড়িত রাজাকার জামাতীরা যুদ্ধাপরাধী। তাদের কোন ক্ষমা নেই। কিন্তু তাদের পাকিস্তানী দোসররা যদি ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে স্বীকার করে নেয় যে, তারা একাততরের গণহত্যার জন্য অপরাধী এবং বাংলাদেশের মানুষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, তাহলে কি এদেশীয় রাজাকার জামাতীরা কি তাদের ভুল স্বীকার করবে? চাইবে ক্ষমা তিরিশ লাখ শহীদের কাছে? স্বপ্ন দেখতে পারেন। অসুবিধে নেই। তবে আপাতত পড়ে দেখুন, পাকিস্তানের সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর মুশাহিদ হুসেইন সাঈদ কি বলেছেন।

বাংলাদেশ-পাকিস্তান গণমাধ্যম সম্মেলনে পাকিস্তানী সিনেটর দাবী জানান ১৯৭১-এর গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার কথা। আজকের দ্য নিউজ পত্রিকার খবরে বলা হয়, সিনেটর মুশাহিদ বলেন, "There is nothing to hide on what happened in 1971. What Pakistan did against Bangalis in 1971 can be well dubbed as a crime instead of mistakes. The world is changing over. Japan apologised to China. Pakistan should also come up with an apology" ১৯৭১ সাল নিয়ে পাকিস্তানীদের কাছ থেকে এতোটা স্পস্ট বক্তব্য আগে কখনও আসেনি।

পাকিস্তানীরা ভুল স্বীকার করুক আর ক্ষমা প্রার্থনা করুক, তাতে ইতিহাস বদলাবে না। কিন্তু পাকিস্তানীদের দোসর রাজাকার জামাতীরা কখনও বলবে না, তারা ভুল করেছে। অন্যায় করেছে। বরং তারা এখনও উদ্ধত। এখনও নির্বিকার থাকবে। বিকৃত ইতিহাস শেখাবে নব্য রাজাকারদের। এ নিয়ে আড্ডায় আগেও লিখেছি শিবিরের চোখে স্বাধীনতার ইতিহাস। তাই চলুন আজকে সেসব জামাতী রাজাকার ও ঘাতকদের মুখোশ খুলে দেই।

Sunday, May 13, 2007

একটি ডিনার পার্টি ও ক'জন সাংবাদিক:

ব্লগে লেখা চলছে বছর দু'য়েক ধরে। তার মধ্যে একজন পাঠকের সাথে যোগাযোগ প্রায় গত একজন বছর ধরে। নিয়মিত ই-মেইল চালাচালি। তারপর জানলাম, তিনি খবরের জগতের সাথে জড়িত। আমার অনেক বছরের সিনিয়র। আমি নিজে যদিও খবরের দুনিয়া কেউ না তবে খবরগুলো প্রবলভাবে আমাকে নাড়া দেয়। তাই নিয়ে আমার কীবোর্ড সচল হয়। মৌলবাদ, মুক্তিযুদ্ধ, রাজাকার, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সমাজ-সংসার নিয়ে যেসব ভাবনা আমার মনকে নাড়া দেয় তা-ই আমি তুলে ধরি আমার আড্ডার পাতায়।

আমার এই পাঠক সিনিয়র ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ ভার্চুয়াল। তার লেখা আর এডভোকেসীর আমিও ভক্ত। খবর জানলে আর রসদ থাকলে তিনি পাঠিয়ে দেন। আমার লেখা নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানান। লেখার লিঙ্ক পাঠিয়ে দেন অন্য বন্ধুদের কাছে। চলতে থাকে আমাদের ই-মেইল চালাচালি। গতকাল শনিবার রাতে ছিল তার বাসায় আমার ডিনার পার্টির নিমন্ত্রণ। ব্লগার হিসেবে পরিচয়, সেই সূত্রেই নিমন্ত্রণ। ডিনারে মেন্যু ছিল অনেক। এখন তার ফিরিস্তি দিয়ে অন্যদের হিংসের শিকার হতে চাই না। তবে আমার প্রিয় কাবাব ছিল। ছিল খুব মজার লাউ সেমাই। খাবার পর্ব শেষ হলো।

আমি একমাত্র আমন্ত্রিত অতিথি। তাই চলল বিরামহীন আড্ডা। আসল তাসনিম খলিলের মুক্তি নিয়ে কথা। আসল সংবাদ জগতের কথা। আসল সাহস-ভীরুতা আর গা বাঁচিয়ে চলার কথা। পটভূমির কথা। এলিট, মজদুর, ড্রইংরুম ভিততিক লেখক আর বর্ণচোরাদের কথা। আমি ব্ক্তা ভাল না। কিন্তু শ্রোতা খুবই ভাল। শুনতে থাকি। কিছু বলি না। হাসি। সমমনাদের কথায় তাই হয়তো চায়ের কাপে ঝড় উঠে না। ক্লান্ত হই না।

মাঝে মাঝে ভাবি, বিধাতা আমাকে কেন শুধু দু'টি চোখ আর দু'টি কান দিলেন? আমার চোখ আর কানের বিস্তৃতি যদি বাংলাদেশের আয়তনকে ছেড়ে যেত তাহলে সমস্ত মানুষের দু:খ-কস্ট-যন্ত্রণা শুনে-দেখে আমার হৃদয়ে ধারণ করে নীলকন্ঠ হতাম। নীলকন্ঠ হয়ে উঠা হয় না। সমুদ্রের স্যালাইনিটি বাড়তে থাকে। আমার অক্ষমতা আমাকে পীড়া দেয়। ভর্তসনা শুনতে হয় অন্যদের। মনে হয়, চোখ থাকতে অন্ধ হয়ে আছি। তেলে মাথায় সবাই তেল দেয়। আমিও তার বাইরে না। আর যারা গন্ধ খুঁজে তারা মিটমিট করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। কারণ, এই অক্ষমদের জটলায় আমিও বসে আছি। আমার শত্রু আমার অক্ষমতা, আমার একান্ত মানবিক সীমাবদ্ধতা।

সাংবাদিক তাসনিম মুক্তি পেয়েছেন। আহমেদ নুর পাননি। অপূর্ব শর্ম্মা পাননি। তারাও সাংবাদিক। তারা ঢাকা শহরের না। তারা ব্লগান না। তারা শিরোনাম হন না ব্লগে বা পত্রিকার পাতায়। তাসনিম খলিল শিরোনাম হয়েছেন সিএনএন, ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন, বিবিসি আরও অনেক পত্রিকা আর ব্লগের পাতায়। অন্য সাংবাদিকরা চোখের আড়ালে, তাই তারা কি আমাদের মনের আড়ালে? দোষ দেওয়া সহজ। লেখা কঠিন। প্রোফাইল তৈরী করা কঠিন। তাই চলুন সচল হোক তাদেরকে নিয়ে সকল ব্লগারদের কীবোর্ড। তাদের প্রোফাইল তৈরী করে ছবি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলার তথ্যগুলো তুলে ধরুন। তাসনিম আমাদের জন্য একটা কাজ সহজ করে দিয়েছেন। যারা তাসনিমের ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছিলেন, সেইসব পশ্চিমা মাধ্যম, মানবাধিকার সংস্থা, সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক গিল্ড আর এলিট ব্লগাররা এখন নীরব থাকবেন কিভাবে?

আমি কথা দিচ্ছি আমার সাধ্যমতো তাদের প্রোফাইলগুলো আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কাছে তুলে ধরার চেস্টা করবো। তার সাথে আশা করি পাব সতীর্থ ব্লগারদের। বাংলাদেশের বুকের উপর হিমালয় পর্বত বসে থাকতে পারে। কথা সত্য ও বাস্তব। কিন্তু হিমালয় পর্বতও হেলে পড়বে যখন সকল সচেতন জনতা ঠেলতে শুরু করবে। কথাটা আমার না। এটা ইতিহাসের দেয়াল লেখনী। অনেকের পড়তে একটু সময় লাগে এই যা!

Friday, May 11, 2007

Blogger Tasneem Khaleel Arrested by the Army


(Cross posted at Deshivoice and Bangla Adda)

As a blogger, I'm concerned about Army's action to arrest Tasneem Khaleel. Please read this breaking news from Salam Dhaka, "Army has picked up a freind, blogger, and human rights activist Tasneem Khalil. We're not going to let this go unanswered.Tasneem's blog is http://www.tasneemkhalil.com/Tasneem is CNN and Human Rights Watch representative in Dhaka. He also works for Daily Star.The U.S State department, CNN, HRW are being contacted through the highest levels".

Bangla Bloggers have already started their protest against this action. Rezwan has just published this breaking news in Bangla Blog. Please join me along with thousands of bloggers to condemn this cowardly action by the Military.

Monday, May 07, 2007

সরকার কি ভেবে দেখবেন?

(একই সাথে আড্ডার পাতায় প্রকাশিত)
তত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে আমরা তাকিয়ে আছি দ্রুত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রত্যাবতর্নের প্রত্যাশায়। স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার দাবী ছিল সাম্প্রতিককালের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু। এখন সেই স্বচ্ছতা যদি আবারও বিলুপ্ত হয় তাহলে দেশের জনগণ আরেকটি সুযোগ হারাবে। আজকের খবরের কাগজে চোখ বুলাতেই নজরে পড়ল, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে মামলা গোপন আদালতে পরিচালিত হবে। খবরটা পড়ে ভাবতে লাগলাম লুকোচুরি খেলা কিন্তু কখনও স্বচ্ছ হয় না। বরং আড়ালে থাকলেই সন্দেহ আর প্রশ্ন সবার মনকে নাড়া দিবে।

আজকের ভোরের কাগজের প্রতিবেদনে পড়লাম, "ভিআইপি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা বিচারের জন্য জাতীয় সংসদ ভবনের এমপি হোস্টেলে স্থাপিত বিশেষ আদালতে বিচারকাজ পর্যবেক্ষণের জন্য সংবাদ মাধ্যমগুলোকে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। গতকাল রোববার বিশেষ আদালতে বিচারকাজ শুরুর প্রথম দিনে সাংবাদিকদের আদালত কক্ষে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সাংবাদিকদের ভেতরে ঢোকার অনুমতি নেই বলে জানায়। কিন্তু কোন কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন এবং কী হিসেবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কর্তব্যরত পুলিশ কিছুই জানাতে পারেনি। তাদের কথা, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের প্রবেশ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তারা শুধু ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের আদেশ পালন করছেন"।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা কেন? মামলা যদি নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হয়, তখন সেখানে ভয় বা আশঙ্কার কোন কারণ দেখি না। বরং সাংবাদিকদের পর্যবেক্ষণ করতে দেওয়ার সুযোগ তত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে কাজ করবে। স্বচ্ছ্তার কোন বিকল্প নেই। বিকল্প নেই জনপ্রিয় জনসমর্থনের। সরকার কি ভেবে দেখবেন?

Sunday, May 06, 2007

জামাতের নেতা মুজাহিদ বচন


জামাতের নেতা আলী আহসান মুজাহিদের বচন শুনে টাস্কি খেলাম। গতকালই এটিএন বাংলার খবরে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা নিয়ে তার সাক্ষাতকার দর্শকদের যথেস্ট বিনোদন দিতে পেরেছে। এমনিতেই আমাদের দেশে বিনোদনের জন্য টিভির খবর সর্বেসর্বা। তুলনাহীন। খবরের মধ্যে মাথামোটা (দু:খিত) মাথাভারীদের সাক্ষাতকার সবচেয়ে বেশী বিনোদনমূলক। তা তাদের ভাষা,কথা, ব্ক্তব্য আর উচ্চারণ সবকিছুর মিলিয়েই।

না, আমি জামাতীদের মাথা মুজাহিদ সাহেবের বক্তব্য নিয়ে কিছু বলব না। এমনিতেই উনাদের মন এখন খুব খারাপ। পরিবারের ভাই বেরাদর সব যখন জেলে বসে আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখে আর বাকীরা যাই যাই করছে তখন কি আর এই মরার সংসারে মন টিকে? বৈরাগী মনে শান্তি নেই। ইসলাম নিয়ে ব্যবসাপাতি আজকাল একটু লসে আছে। ক্ষমতার হাওয়াই মিঠাই চাখতে চাখতেই মিইয়ে গেছে। যুবরাজের হাত ধরে কি ক্যারিশমাই না তৈরী হয়েছিল। ইসলামী জেহাদ এগিয়ে যাচ্ছিল হালকা গোলাপী মিঠা শাড়ীর আচঁলের আশ্রয়ে। কিভাবে যে হোঁচট খেল স্বপ্নেও ভাবেনি? স্বপ্ন যে এতো দুষিত হতে পারে তা মুজাহিদের কথা এটিএন বাংলার খবরে নিজে না দেখলে বিশ্বাস হতো না।

শুক্রবারের খবরে দেখলাম, মুজাহিদের বিরুদ্ধে চান্দাবাজির মামলা হয়েছে। আমাদের সময় লিখছে, "সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ এবং জামায়াতের সাবেক সাংসদ মো. ফরিদ উদ্দিনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ২৫ লাখ টাকার চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বিকাল সিলেটের ২ নং আমলী আদালতে কানাইঘাট থানার রাজেখেল গ্রামের মো. আবদুল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন"।

এটিএন বাংলার খবরে তার সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, গত পাঁচ বছর তিনি এবং তাদের বিএনপি জামাত জোট সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ করেছেন আর এখন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা আনা হয়েছে। এটা হয়রানিমূলক। তিনি প্রধান উপদেস্টার দৃস্টি আকর্ষণ করে তার কাছে ন্যায্য বিচার দাবী করেন। খুব কস্ট লাগল ভদ্রলোকের হয়রানি দেখে। এই মরার দেশে নামী মানুষরা ক্ষমতা হারালে নুড়ি দামও পায় না। হয়রানির শিকার হয়। কস্টে বুক ফাটে।

মাথামোটা মুজাহিদ অবশ্য চোখের মাথা খেয়েছেন। তার জেহাদী জাতীয়তাবাদী পরিবারের লোকজন দুর্নীতির কারণে জেলের ভাতে কাঁকড় বাছে, তখন তিনি আবার গর্বিতভাবে দাবী করেন দুর্নীতিমুক্ত সত লোকদের শাসনের পাঁচটি বছরের কথা। তামাশা করার একটা লিমিট থাকা উচিত। মুজাহিদ এই বয়সে স্বপ্ন বিভ্রমে আক্রান্ত হতে পারেন সমস্যা নেই। কিন্তু ত্রাণের শাড়ী আর টিন দিয়ে তৈরী স্বপ্ন প্রাসাদ যে ভেংগে পড়েছে সেই বোধ বোধ হয় এখনও তাকে স্পর্শ করেনি। মামলা হয়েছে কোর্টে। তিনি আবদার জানান ফখরুদ্দীন বরাবর। ঘটনা কি? খালি পেছনের দরজার ধান্ধা। কোর্টের মামলার মুখোমুখি হবেন কোর্টে। প্রধান উপদেস্টার কাছে আবদার কেন? জামাতীদের হঠাত করে জেলের জামাই আদরের প্রতি এতো অনীহা কেন? বড়োই নাফরমানী কথা। খোদার খেলের সাথে খোদ্দারির ধান্ধা!!!

Wednesday, May 02, 2007

রাজাকার নিয়ে দু'টি কথা:

(একই সাথে আড্ডার বাংলা পাতায় প্রকাশিত)
তর্ক বিতর্কে জড়াবার কোন ইচ্ছে বা রুচি নেই। সহজ বিষয়টিকে জটিল করারও প্রয়োজন নেই। যারা কথার মারপ‌্যাঁচ দিয়ে ৭১'এর রাজাকারের বিষয়টিকে জটিল করতে চায় তাদের সততা ও এথিক্যাল চাপের ব্যারোমিটার ব্লগে দেওয়ার কোন ইচ্ছে নেই। পানি ঘোলা করে মাছ ধরার কেরামতী যারা দেখিয়েছে তারা জানে এর ভেতরের মারফতী কাহিনী। সামরিক জিয়া বিসমিল্লাহ যোগ করে কিন্তু ঘাতক গোলাম আযমকেও দেশের ভেতর ঢুকিয়েছিলেন। স্বার্থ ছিল রাজনৈতিক।

হঠাত করে ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা রাজাকার মান্নানের কথা মনে পড়ল। তাকে একবার সাংবাদিকরা জিগ্যেস করল, "হুজুর আপনার পেপারে সিনেমার অ্যাড দেন কেন"? মান্নানের উততর খুব সাদামাটা ও স্পস্ট ছিল। উনি বললেন, "আমি তো ধর্ম প্রচারের জন্য পেপার খুলি নাই, পেপার খুলেছি বিজনেস করার জন্য"। তাই রাজাকার মান্নান অতীব সত্য কথা নির্লজ্জভাবে বলে দিয়েছেন যা এদেশের রাজনীতিবিদদের মুখোশ খুলে দেয়। ব্যবসার মতো রাজনীতির ধান্ধাও ক্ষমতায় যাওয়া। জনপ্রিয়তা পাওয়া। মানুষের বাহবা নেওয়া। সেই রাজনৈতিক ব্যবসায় রাজাকাররা পেয়ে যায় ক্ষমতার রুটি। খুবই সিম্পল ইকুয়েশন।

তাই, গণঘাতক রাজাকারদের নৃশংসতার কথা তাদের ইতিহাস রাজনীতির পালাবদলে চাপা পড়ে থাকে। তারপর ইতিহাসের জীর্ণ পাতায় বেরে উঠা উইপোকারা গ্রাস করতে চায় ইতিহাসের আলোকিত সত্যগুলোকে। রাজাকারদের বিচার হয়নি, তাই তারা নির্দোষ। রাজাকার জামাতীরা নেহাতই ধর্মভিততিক দল যারা ধর্মের ব্যবহার করে রাজনীতির স্বার্থে। ইনকিলাবের ব্যবসাযিক স্বার্থ আর জামাতীদের রাজনৈতিক স্বার্থ একাকার হয়ে যায়। সব বিভেদ ভুলে যায়। গো আযম, নিজামী, কামরুজ্জামান, সাঈদী সব জাতে উঠে। তারাও জনদরদী হয়। সমাজ সেবক হয়। আবারও মানুষের মুখোশ পড়ে মনুষ্য সমাজে বসবাসের সাহস দেখায়। কারণ?

কারণ, আমরা। আমরা যারা সাদা কালোর তফাতটাকে হালকা করতে চাই। রিকন্সিলিয়েশনের কথা বলে বিভ্রান্ত করতে চাই। তেল জল মেশে না। মেশানোর চেস্টা তাই বৃথা। রাগ, কস্ট, অভিমান, আবেগ দিয়ে রাজাকার প্রতিরোধ সম্ভব না। রাজাকার প্রতিরোধ করতে হলে সচেতন আর আপোষহীন প্রজন্মের দরকার। ইতিহাস সচেতন মানুষের দরকার। জনপ্রিয় সামাজিক এজেন্ডার দরকার। মানুষের দাবী যখন সোচ্চার হয়, ঐক্য যখন প্রবল হয়, তখনই রাজাকার প্রতিরোধ একটা প্রাতিস্ঠানিক চেহারা পাবে। জনপ্রিয় দাবীকে উপেক্ষা করার সাহস বা উপায় কারোই থাকে না। তাই, রাজাকার বিষয়টাকে, একাততরের বিষয়টাকে যারা লঘুভাবে হেলা করতে চান তাদেরকে নির্বুদ্ধিতার প্রতি করুণা জানাই। করুণা জানাই যারা অবলীলায় ধর্ম ভিততিক পোসট দিয়ে মানুষের ধর্মবোধকে প্রতারিত করে।

আমি হতাশ না। আমার এক সিনিয়র বন্ধুর সাথে যখন প্রথম দেখা তিনি বললেন, তোমরা জিয়ার শাসনামলের মানুষ। বিভ্রান্ত হও জিয়ার সামরিক ক্যারিশমা দেখে। তারপর দেখি সেই সিনিয়র বন্ধুটিরও ভুল ভাংগে। সেও দেখে জিয়ার ক্যারিশমা কিন্তু সবার মননকে প্রতারিত করতে পারেনি। ইতিহাস যেখানে জ্বলছে আলেকিত সুর্যের মতো, সেখানে কয়েক খন্ড মেঘ আর কিছু দমকা বাতাস এলোমেলো করতে পারে আজকের সকালের আয়োজন, কিন্তু তাই বলে পারে না সূর্যের আগমনকে ঠেকাতে। রাজাকার প্রতিরোধে সেই সূর্য সন্তানদের প্রণতি জানাই যারা এদেশের পতাকাকে এগিয়ে নিবে। যারা রাজাকারদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। ইতিহাসকে নতুন করে নির্মাণ করবে তাদের আপোষহীন হাত দিয়ে।

Tuesday, May 01, 2007

ধর্ম নিয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ:

ধর্ম নিয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক। ধর্মের অপব্যবহার নিষিদ্ধ হোক। এগুলো কোন শ্লোগান নয়। ধর্ম নিয়ে অপকর্ম নতুন নয়। রাজনীতি আর দলীয় স্বার্থে ধর্মের ব্যবহারও নতুন নয়। আড্ডার পাতায় অসংখ্য বার লিখেছি কেন ধর্মভিততিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত। ধর্মের মধ্যে রাজনীতির আবিস্কার ধর্ম ব্যবসায়ীদের এক নতুন হাতিয়ার। ইসলাম এধরনের ধর্ম ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধার্মিকদের বিশ্বাসকে রক্ষা করার আহবান জানিয়েছে।

বাংলাদেশে ধর্মের নামে কি পরিমাণ অপকর্ম হয়েছে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। এই উপমহাদেশে ১৯৪১ সালের ২৬শে আগস্ট ধর্মভিততিক রাজনৈতিক দল জামাতে ইসলামীর গঠন হয়। তারপর থেকেই এরা ধর্মান্ধতার মাধ্যমে মুসলামানদের বিশ্বাসকে কলুষিত করেছে। জামাত জন্মলগ্ন থেকেই বৃটিশদের পদলেহন করেছে। বলেছে বৃটিশরা এই উপমহাদেশের শত্রু নয়। এই উপমহাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে দালালির ইতিহাস এভাবেই জামাতীরা শুরু করে। ইতিহাস সাক্ষী দিবে জামাতীদের দায়বদ্ধতা অনেক বেশী।

জামাতের ডিগবাজীর ইতিহাস আরও চমকপ্রদ। ১৯৬১ সালে জামাতের গুরু মওদুদীর ফতোয়া ছিল নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। ফাতেমা জিন্নাহকে রাস্ট্রপ্রধান করলে জামাতীদের ইসলাম বরবাদ হয়ে যাবে। সেই সময় মওদুদীর লেখা "বিংশ শতাব্দীতে ইসলাম" নামের পুস্তিকায় নারীদের রাস্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলে, "রাজনীতি, দেশের প্রশাসন ব্যবস্থাপনা ও সামরিক খিদমত এবং এ ধরণের অন্যান্য কাজ পুরুষের। চোখ বন্ধ করে অন্যদের অজ্ঞতার অনুকরণ করা জ্ঞানের পরিচায়ক নয়। ইসলাম নীতিগতভাবে যৌথ সমাজ ব্যবস্থার বিরোধী। পাশ্চাত্য দেশগুলোতে এর অত্যন্ত খারাপ পরিণাম দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশের জনসাধারণও যদি তা ভোগ করার জন্য তৈরী হয়ে থাকে, তবে তা যত ইচ্ছে করতে পারে..."। এভাবে ফাতেমা জিন্নাহর রাস্ট্রপ্রধান পদ গ্রহণ করার বিরোধিতা করে ১৯৬৪ সালে ফাতেমা জিন্নাহর সাথে মোর্চা গঠন করে। সাথে সাথে ঘোষণা দেয়, মিস জিন্নাহর নেতৃত্বে ভোট না দিলে পাপ হবে। ১৯৬৪ সালের ১১ই অক্টোবর সাপ্তাহিক শেহাব পত্রিকায় মওদুদী তার ফতোয়া উল্টিয়ে বলেন, "মোহতারেমা ফাতেমা জিন্নাহকে নির্বাচন করায় এছাড়া কোন অসুবিধা নেই যে, তিনি একজন মহিলা। এদিক ছাড়া আর সব গুণাবলীই তার মধ্যে রয়েছে যা একজন যোগ্য রাস্ট্রপ্রধান প্রার্থীর জন্য বলা হয়েছে"। আর বাংলাদেশে বিএনপি জামাত জোট তো নারী নেতৃত্বকে স্বীকার করেই মোর্চা গঠন করে। এই হচ্ছে জামাতীদের রাজনৈতিক ইসলামের আসল চেহারা।

এই হচ্ছে জামাতীদের ইতিহাস। ক্ষমতার রুটির জন্য এরা নিজেদের স্বরচিত আদর্শ গ্রহণ ও ত্যাগ করার বাণিজ্য চালায়। তাই ধর্মের নামে এরা পড়ে নানান মুখোশ। বিভ্রান্ত করতে চায় মুসলিম উম্মাহকে। বিভক্ত করে মুসলমানদের। অস্ত্র তোলে, ভয় আর ভীতি দেখায়। প্রলোভন দেখায়। মধ্যপ্রাচ্যের তেলের বদান্যতায় শুরু হয় জামাতীদের পঁচাততর পরবর্তী যাত্রা। তারপর থেকেই ব্যাংক, হাসপাতাল, দাতব্য প্রতিষ্ঠান, সমাজ সেবা প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার দিয়ে জামাত-শিবির তাদের প্রভাব বলয় তৈরী করেছে।

চট্রগ্রাম আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের দৌরাততের কথা কারও অজানা নেই। ধর্মভিততিক রাজনীতি যে কতোটা বিষাক্ত তা তুরস্ক, আলজেরিয়া আর আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক কালে প্রমানিত হয়েছে। আর আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে জামাতীদের হত্যাযজ্ঞের কথা কখনও ভুলব না। তাই প্রতিহত করতে হবে জামাতীদের সর্বত্র। যারা জামাতীদের তোষামোদ করেছে, প্রশ্রয় দিয়েছে, আশ্রয় দিয়েছে তাদেরকেও চিন্হিত করে প্রতিহত করতে হবে। ধর্মের নামে অপকর্ম মানবতার সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ নিতে এগোতে হবে নতুন প্রজন্মকে।

Monday, April 30, 2007

আবর্জনা পরিস্কার

(একই সাথে আড্ডায় প্রকাশিত)
আশেপাশে আবর্জনা পরিস্কার করা কতোটা জরুরী তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানে। যারা নর্দমার গন্ধ ও পচা পানির গর্ত এড়িয়ে সাবধানে পা ফেলে রাস্তা পার হতে চান তা যে আজকাল কতোটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে সেটা বোদ্ধা নাগরিকরা হাঁড়ে হাঁড়ে টের করতে পারছেন। একটু আগে অ:র:পি:র লেখা ক্যামনে কি! ক্যান!!! হ্যান ত্যান ফ্যান পড়ে মনে হলো আমাদের নাগরিক জীবনে আবর্জনা পরিস্কার কতোটা জরুরী হয়ে পড়েছে। তার ধারালো কথার এরোসোলে আবর্জনা আর পোকা মাকড়ের দৌরাতত লাঘব না হয়ে তাদের গুণগুণানি আরও বাড়বে তা আমি জানতাম।

এই প্রশ্নটা শুধু আমার একান্তে মনে আসে না আরও অনেকের ভাবনার মধ্যে এই প্রশ্নটা বারবার ঘুরপাক খায়, স্বাধীনতার ছত্রিশ বছর পর পাকীদের পা চাটা রাজকার জামাতী পোকা মাকড়দের প্রভাব প্রতিপততির পরিসীমা কতোটা? তাদের প্রভাবের ব্যাপ্তি যতোটুকুই হোক না কেন নাগরিক জীবনে আমরা ঠিকই বুঝি ফুটপাথে পড়ে থাকা এক পীস মলের বদবুর ব্যাপ্তি কতোটা বেশী। নাগরিক জীবন থেকে ব্লগীয় জীবন যে খুব একটা আলাদা না তা সবাই জানে। তাই এখানকার ভার্চুয়াল বদবুটা একটু বেশী প্রখর, একটু বেশী নজর কাড়ে।

তাই হাসান মোরশেদ যখন আবর্জনা কোয়ারেন্টাইন করে সতকার করার কথা বলেন তা খুব যুক্তিযুক্ত মনে হলেও ভাবি তার শুরুটা কিভাবে হবে? উততরটা সহজ। এটা একটা নাগরিক দায়িত্ব। যেমন মিউনিসিপ‌্যালিটি বিজ্ঞাপন দিয়ে বারবার বলে আপনার বাসার চারপাশের আঙ্গিনা পরিচ্ছন্ন রাখুন তেমন এই সমাজ থেকে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে উতখাত করতে হলে নিজের নিজের বাসা থেকেই শুরু করতে হবে।

তবে কাজটা মোটেও সহজ না। আবর্জনা কিন্তু একটা বাই প্রোডাক্ট। একে অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই হতাশ হওয়ারও কিছু নেই। সৌদী আরব আর পাকিস্তানে মৌলবাদী জঙ্গীরা গত ক'দিন ধরে খবরের শিরোনাম হয়েছে। বাংলা ভাইয়ের সহচররা এখনও ধরা পড়ছে। কিন্তু কেউ কি একবারও ভেবে দেখেছেন মৌলবাদী রাজনীতিকে আশ্রয় সাশ্রয় দিলে জঙ্গীদের উতথান হবে, বিস্তৃতি ঘটবে। তারা নোংরা ছড়াবে। বদবু ছড়াবে। তাই দরকার আবদ্ধ আবহাওয়ার অবসান। সৌদী আর পাকিস্তানে যেমন দরকার গণতন্ত্রের আগমন। তেমনি বাংলাদেশেও দরকার গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির বিস্তৃতি আর ঐক্য। না হলে এই দুর্গন্ধের মধ্যেই পার করতে হবে নাগরিক জীবন। তা বাস্তব হোক আর ভার্চুয়াল হোক সেই প্রশ্নটা তেমন জরুরী না।

Friday, April 20, 2007

মিডিয়া কাভারেজ:০৪২১

বাংলাদেশে রাজনীতিতে এখন নতুন হাওয়া চলছে। এখন চলছে নিষেধাজ্ঞার আয়োজন। আজকের ভিওএ ও বিবিসি'র নিউজ কাভারেজগুলো আপনাদের জন্য তুলে দেওয়া হলো।

ভিওএ'র সকালের খবরে শেখ হাসিনার দু'টো সাক্ষাতকার প্রচারিত হয়।
Hasina-voa-0420.mp...

বিবিসির প্রভাতী অনুষ্ঠানে ড: কামাল সাক্ষাতকার প্রদান করেন।
Politics-BD-BBC-04...

বিবিসির প্রভাতী অনুষ্ঠানে আজকের সংবাদ পত্রের কাভারেজ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
Politics-analysis-...

Thursday, April 19, 2007

শেখ হাসিনার দেশে ফেরার উপর নিষেধাজ্ঞা

বাংলাদেশের রাজনীতি যে আবারও অনিশ্চয়তার দিকে পা বাড়িয়েছে তা আলাদা করে বলার কোন প্রয়োজন নেই। বর্তমানে দুই নেত্রীকে দেশ থেকে বাইরে রাখার আয়োজন মোটেও কোন শুভলক্ষণ নয়। এদেশের জনগণ সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহন ও নিয়ন্ত্রণকে কোনভাবেই গ্রহণ করবে না। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা গণমাধ্যমে ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। এ পর্যায়ে আড্ডা পাতা বিদেশী মিডিয়ার কাভারেজগুলো পাঠকদের জন্য তুলে দিল।

বিবিসিতে এক সাক্ষাতকারে শেখ হাসিনা বলেন:

Hasina-BBC-0418.mp...

ভিওএকে হাসিনার সাক্ষাতকার:

hasina-voa-0419.mp...

জার্মান রেডিওকে হাসিনার সাক্ষাতকার:

Hasina-DW-0418.mp3

বিবিসির বিশ্লেষণ:

abdul gaffar-bbc-0...

ভিওএর বিশ্লেষণ:

Analysis-VOA-0419....

Wednesday, April 18, 2007

বিবেক বিক্রির বিজ্ঞাপন:

বাংলাদেশের রাজনীতির পালে খুব শীঘ্রি হাওয়া কি লাগছে? মনে হয় না। রাজনীতির মারপ‌্যাঁচ সত্যি বড্ডো জটিল। কখন যে কোনদিকে বাতাস লাগবে তা আচঁ করা সত্যি দুরুহ। এদেশে মিডিয়া সুর বদলায় খুব দ্রুত । নতুন আর কি? আমাদের চোখ অভ্যস্ত। হঠাত আমার এক বান্ধবীর বাবার কথা মনে পড়ল। ভদ্রলোক পেশায় সাংবাদিক ছিলেন। সেটাই তার জন্য কাল হয়েছিল। সামরিক প্রশাসক জিয়ার সময় তাকে জেলে পুরে রাখা হয়েছিল। কোন বিচার হয়নি। লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তিনি নেননি। তিন বছর বিনা বিচারে জেলের পানি খেয়ে বাড়ী ফিরেন। স্বৈরতন্ত্র একেক সময় একেক রুপে আসে। এরশাদও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ করতে এসেছিলেন। তারপর কি হয়েছে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। আজকে জেবতিক আরিফের লেখাটা মনে করিয়ে দিলো কি চমতকারভাবে এদেশে মিডিয়া সুর বদলায়। তোষামোদকারী চাটুকারের দল চিরকালই মেরুদন্ডহীন হয়ে থাকে।

সেইদিন এক সাংবাদিক বন্ধুর সাথে দেখা। জিগ্যেস করলাম, কি আসছে না কি? বলল, সরাসরি তো আসবে না। কিন্তু সোজা আঙ্গুল দিয়ে কি ঘি উঠে? কিন্ত বাঁকা করলেই তো সবাই বুঝে ফেলবে। তবে গত ১৬ বছরে দেশে একটা গুনগত পরিবর্তন হয়েছে। লোকজনকে বারবার বোকা বানানো সম্ভব না। আর আঙ্গুল বাঁকা করে ঘি তুলতে গেলে বাইরের দুনিয়ার লোভনীয় ঘিয়ের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। স্বৈরশাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন একজন সাংবাদিক উপকথার নায়কের মতো স্মরণীয় হয়ে আছেন। অসম্ভব সাহসিকতার সাথে তিনি রিপোর্ট করতেন। স্মরণ করি সাহসী সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দীনকে। সময়ের টানে সবকিছু নস্টদের হাতে গেলেও সবাই কিন্তু বিবেক বিকিয়ে দিবে না। সময় যে অনেক বদলে গেছে। এটা ভুলে গেলে বড্ডো বোকামী হয়ে যাবে। সংবাদ ও যোগাযোগ মাধ্যমে যে অকল্পনীয় পরিবর্তন এসেছে তা মনে রাখা খুব জরুরী।

একই সাথে আড্ডা আর দেশীভয়েসে প্রকাশিত।

Wednesday, April 11, 2007

Political Crisis in Bangladesh

Awami League Leader Sheikh Hasina's interview with BBC on April 11, 2007.

hasina1-0411.mp3

Wednesday, January 31, 2007

একটি প্রাণবন্ত রাজনৈতিক আলোচনা:

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে একটি প্রাণবন্ত আলোচনা সমপ্রতি প্রচারিত হয়েছে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা অনুষ্ঠান হ্যালো ওয়াশিংটনের উদ্যোগে৷ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ইকবাল বাহার চৌধুরী৷ এতে অংশগ্রহণ করেন বজলুর রহমান, সম্পাদক সংবাদ, ড: জিল্লুর রহমান, অধ্যাপক উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয় ও ড: এহতেশাম চৌধুরী৷ এরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ অঙ্গনে স্বনামধন্য৷ শ্রোতাদের অংশগ্রহণে প্রশ্নোওরের মাধ্যমে প্রায় ৪৫ মিনিটের অনুষ্ঠানটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাদেরকে ভাবার সুযোগ দেয়৷ রিয়েল প্লেয়ারে অনুষ্ঠানটি শুনতে হলে কিক করুন: কারেন্ট সিচুয়েশন ইন বাংলাদেশ

নিয়মিত পড়ুন বাংলা গ্রুপ ব্লগিং দেশীভয়েস

Saturday, January 27, 2007

কন্ঠরোধ কেন?

(দেশীভয়েসে এক সাথে প্রকাশিত)
দেশে জরুরী আইন জারির দু'সপ্তাহ পরে হঠাত্‍ করে গণমাধ্যমের গলা চিপে ধরা হলো কেন তা আমরা অনেকেই জানি না৷ তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনেক ভাল উদ্যোগ নিচ্ছেন এ নিয়ে জনমনে কোন সন্দেহ আছে বলে মনে হয় না৷ লোক দেখানো উদ্দেশ্যে অথবা আগাগোড়া সংস্কারের দুরূহ ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে যদি সরকার কোমড় বেঁধে মাঠে নামে তাহলে বলবো উদ্দেশ্য পুরোটা সত্‍ না৷ রাজনৈতিক অথবা সামাজিক সংকট এমন কোন বিপর্যয়কর অবস্থায় নামেনি যে হঠাত্‍ করে গণমাধ্যমের উপর বিশাল খবরদারি ও নজরদারি জারি করতে হবে৷ জনগণ নীরব হলেও বোকা নয় এটা সরকারের বোঝার দরকার আছে৷

সামহোয়্যার ইন-এ আমরা যারা ব্লগাই সেখানেও বিধিনিষেধের হুমকি অত্যন্ত হাস্যকর৷ অনেকেই সামহোয়্যার ইন-এ তাদের কথা প্রকাশ না করে অন্য ইন্টারনেট মাধ্যম বেছে নেবে- তা বোঝার মতো বুদ্ধিমত্তা সরকারের নীতিনির্ধারকদের আছে কি-না তা আমি জানি না৷ চোখ বন্ধ করে আর কন্ঠরোধ করে সরকার যদি মুক্ত চেতনাকে ধ্বংস করতে চায় তাহলে তারা কেবল পূর্বসূরীদের পথই অনুসরণ করবে৷ দেশ দুর্নীতিমুক্ত হোক, সন্ত্রাস নিপাত যাক৷ এসব ব্যাপারে কোন আপত্তি কারও নেই৷ কিন্তু রেখে ঢেকে আর আড়ালে আবডালে যখন অপারেশন চলে তখন তা হারায় স্বচ্ছতা আর বৈধতা৷ সেখানে দুর্নীতির ফাঁক ফোকর থেকেই যায়৷ বিগত সরকারের আমলে র‌্যাবের মাধ্যমে যে রাস্ট্রীয় সন্ত্রাস চলেছে তা যদি আরও ব্যাপকতর আকার ধারণ করে তখন সরকার তার আচরণের নৈতিক ভিত্তি হারাবে৷

গণমাধ্যম ও ইন্টারনেটের উপর নিয়ন্ত্রন চাপিয়ে আমাদের স্বাধীন চিন্তা ভাবনাকে অবরুদ্ধ করা যাবে না৷ এধরনের আচরণ বিগত সামরিক জান্তার নির্যাতনের কথা মনে করিয়ে দেয়৷ আশা করি, সরকার তাদের এই জরুরী বিধি নিষেধ সাময়িক ও স্বল্পকালীন সময়ের জন্য বলবত্‍ রাখবেন৷ এর পটভূমিও জনগণের জানার অধিকার আছে৷ সুস্থ নির্বাচনের জন্য স্বাধীন মতামত ও ভাবনা প্রকাশের সুযোগকে সংকুচিত না করে তা অবারিত করে দেওয়ার দরকার৷ তাই, সরকারের এই আকস্মিক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাই আমি নিজে৷ আপনাদেরকেও এই প্রতিবাদে যোগ দেওয়ার আহবান জানাই৷ আশা করি, জনগণ অবিলম্বে তাদের স্বাধীন ভাবনা প্রকাশের সুযোগ পাক৷ কারণ, জনগণের কন্ঠরোধ করা স্বৈরাচারী আচরণের প্রতীক৷ আর স্বৈরাচারের ধ্বনি শুনলে নুর হোসেনরা যে আবারও জেগে উঠবে৷

নির্বাচন নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট:

(আড্ডার ইংরেজী ভার্সনে প্রকাশিত)
জানুয়ারীর ২৫ তারিখে ওয়াশিংটন পোস্টে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে৷ বাংলাদেশে আশু নির্বাচনের কোন সম্ভাবনা নেই৷ নির্বাচন কমিশন, ভোটার লিস্ট ও প্রশাসনিক সংস্কার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের প্রয়োজন৷ জরুরী আইন জারির ব্যাপারে সামরিক বাহিনীর কৃতিত্ব খুব দ্রুত হারিয়ে যাবে যদি আশু নির্বাচন না হয়৷ ওয়াশিংটন পোস্টটির প্রতিবেদন বাংলাদেশে সামরিক বাহিনীর অতীতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করেছে৷ সামরিক আইন আর জরুরী আইনের আওতায় যে মানবাধিকার লাঘব হতে থাকে তা আলাদা করে বলার দরকার হয় না৷

নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার পেছনে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রতিবেদনটির মূল উপজীব্য৷ জানুয়ারীর ১১ তারিখে ঘোষিত জরুরী আইন যদি দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তনের জন্য নির্বাচনকে বিলম্বিত করে তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অবিশ্বাস ও সন্দেহ প্রকট হয়ে উঠবে৷ জরুরী অবস্থায় রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ হওয়ার সুযোগে মৌলবাদী শক্তি ধমীয় প্রতিষ্ঠানভিত্তিক উন্মাদনা ছড়াতে পারে বলে যে আশঙ্কা পোস্টের প্রতিবেদনটির উপসংহারে টানা হয় তা অমূলক নয়৷ প্রয়াত রাস্ট্রপতি জিয়ার সামরিক আইনের শাসনামলে যে মৌলবাদী জামাতীদের পুনার্বিভাব ও প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তা ভুলে যাওয়া উচিত না৷ রাজনৈতিক অধিকার ও স্বচ্ছতা না থাকলে যে আন্ডারগ্রাউন্ড ও জঙ্গী রাজনীতি বাড়তি শক্তি ও উত্‍সাহ পায় তার জন্য কোন আলাদা গবেষণার দরকার নেই৷

Friday, January 12, 2007

মহামান্য গবা জলহস্তীর বন্দনা:

ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

(দেশে জরুরী আইন চলছে। তাই আপাতত রাজনীতি নিয়ে নাড়াচাড়া বন্ধ। আপনাদের জন্য রঙ্গদেশের রাজগল্প নিয়ে এই গাতক হাজির)

বহুদিন পর গাতক আবার লিখতে বসলো। রঙ্গদেশে এখন শাস্ত্রীয় সঙ্গীত অনুরাগী বলতে গেলে নেই। তাই গাতক অন্ধকার রাতের অলস অবসরে সঙ্গীত বাদ দিয়ে রাঙ্গাবুড়ীর গল্প ফেঁদে বসল। গেলবার ব্লগরাজ্যে তার বান্দরের কেচ্ছা পড়ে লোকজন অনিন্দ্য আনন্দ পায়। তারপর থেকে গল্প লেখার কচলানি লেগেই আছে। অবশ্য গাতকের ঠিক আজকেই গল্প লেখার কথা ছিল না। রাতের বেলা ব্লগ পাড়ায় কিছু শাখামৃগ ও নেকড়ের হৈ হুল্লোড়ে গাতকের ঘুম ভেঙ্গে যায়।

ঢুলুঢুল চোখে দক্ষিণা জানালা খুলে গাতকের আক্কেলগুড়ুম। রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে গুটিকয়েক নেকড়ে বসে ব্লগের চৌরাস্তায় জটলা বেঁধেছে। নিতান্ত কৌতুহূলী হয়ে তাকিয়ে দেখে নেকড়েরা শোকে কাতর। তারপরেও গুণগুণ করে তাদের মহামান্য গবা জলহস্তীর প্রশস্তি গাচ্ছে। কি হয়েছে, কি হয়েছে? ভিনদেশী গাড়োয়ানদের ঘোড়ার শকটের নীচে পড়ে নেকড়ে দলের আদরের তান্ত্রিক শশকটি মারা গেছে। তারপরেও নেকড়েরা উল্লসিত। কারণ, গাড়ী চাপায় মৃত শশকটির শরীর থেতলে গেলেও চক্ষু একটিও নাকি খোয়া যায়নি। হায়রে নির্বোধের দল!!! এই মাসের বাইশ তারিখে এই পবিএ শশকটিকে রাজবেদীতে উৎসর্গ করে ছলেবলে কৌশলে রাজমহির্ষী রাঙ্গাবুড়ীর রাজসিংহাসনে বসার কথা ছিল। এখন এই শশকের অকাল মৃত্যুতে তারাও প্রমাদ গণনা শুরু করল। সব্বোনাশ, তারপর?

হায়রে রঙ্গদেশ। এখানে রংয়ের শেষ নেই। রাজমহির্ষী রাঙ্গাবুড়ী ষোলকলায় পারদশী। গেলবার নরখাদক নেকড়েদের পাল নিয়ে তিনি রাজ্যপাল তৈরী করলেন। অনেক প্রজাবর্গ এতে ভীষণ ুদ্ধ হয়। সবার প্রশ্ন, যে নেকড়ের পাল পশ্চিমা ভাল্লুকদের সাথে মিলেমিশে লাখো নিরীহ প্রজার রক্তের উষ্ণতার স্বাদ নিলো রাঙ্গাবুড়ী তাদেরকে কিভাবে রাজ্যপালে ঠাঁই দিলেন? তিনি উওর দিলেন, “অতীত নিয়ে নাড়াচাড়া করে গন্ধ ছড়াও কেন”? রাজকীয় সুরে বললেন, “অতীতকে মুছে দাও, তাকাও ঝড়ঝড়া ফকফকা সামনের দিকে। চারদিকে ছড়িয়ে দেব রাজানন্দ, মর্দন করো তেলজল একসাথে”। হতবাক প্রজারা অসহায় দর্শক হয়ে তাকিয়ে দেখল নরখাদক নেকড়েরা শুভ্র মেষকের চর্মধারণ করে দেশসেবক হয়ে গেছে। তন্ত্র-মন্ত্র দিয়ে সম্মোহিত করতে চাচ্ছে। কিন্তু প্রজাসকল তো আর নির্বোধ নয়?

রাঙ্গাবুড়ী বশ করে রেখেছেন সবাইকে। আগামী বাইশের সূর্যসকালে প্রজাসকলের আশীর্বাদে যে রঙ্গরাজ্য আলোকিত হবে তার সম্ভাবনা সন্তানকে তিনি ভ্রুনেই হত্যা করলেন। তার পোষা মহামান্য জলহস্তী বিশ্বস্ততার সাথে রাজসিংহাসন পাহারা দিচ্ছে। কথামতো বাইশের শুভ্র সকালে যে তান্ত্রিক শশকটিকে উৎসর্গ করে রাজসিংহাসনে বসার কথা আজকে সেই শশকটির অকালমৃত্যু রাজ্যব্যাপী শঙ্কা ও ত্রাসের জন্ম দিয়েছে। গবা জলহস্তী ডেকে পাঠিয়েছেন জলপাই রংয়ের সরীসৃপদের। সবাই ভয় পাচ্ছে এই সরীসৃপরা ডাঙ্গা থেকে জলে ফিরবে কবে? প্রজাবর্গের স্কন্ধ থেকে কবে তারা নামবে? এসব সরীসৃপদের বিশ্বাস করা যায় না। আজকে দেশের মহামান্য গবা জলহস্তী সেই আয়োজন করেছেন। সবাইকে মুখে কুলুপ দিয়ে নীরব নিস্তেজ হয়ে থাকতে বলা হয়েছে। আবারও প্রজারা মৃতদের মতো নিস্তব্দ হয়ে থাকবে। প্রজাদের নীরব শবদেহের উপর রক্তচোষা নেকড়ের দল হয়তো উল্লাসে বিচরণ করবে, জলপাই রংয়ের সরীসৃপরা দন্তবিকশিত করে বিচরণ করবে। এভাবেই হয়তো রঙ্গদেশের প্রজাবর্গ আবার পেছনের দিকে হাঁটতে থাকবে। মাথা গুঁজবে নোংরা ইতিহাসের আবর্জনায়...(চলবে)।

“কিসে কিসে ভাব নেই? ভক্ষক ও ভক্ষে বাঘে ছাগে মিল হলে আর নেই রক্ষা
শেয়ালের সাড়া পেলে কুকুরেরা তৈরি,সাপে আর নেউলে ত চিরকাল বৈরী!...”
সুকুমার রায়

Thursday, January 11, 2007

রাজনৈতিক দুর্যোগের ঘুর্ণিপাকে:

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্যোগের ঘনঘটা যা এতোদিন আশঙ্কা করা হচ্ছিল তা আগামী কয়েক সপ্তাহের নির্মম বাস্তবতা হতে যাচ্ছে। মহাঐক্যজোটের তিনদিনের অবরোধের শেষদিনে জানুয়ারীর ৯ তারিখে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ রণক্ষেেএ পরিণত হয় পুলিশ যে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশী মারমূখী তা গত ক’দিনে বেশ পরিস্কার হয়েছে। ১৪ দলীয় জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতারা যেভাবে পুলিশী নির্যাতনের শিকার হন আর অবরোধের তীব্রতা প্রমান করে দু’পই বড্ডো অনড়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে পুলিশ এতোটা মারমূখী হার্ডলাইনে কেন? এটা সম্ভব হয়েছে যখন পুলিশ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত ও আশ্বস্ত হয়েছে যে আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামাত সরকার যে কোনভাবে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসছে। কারণ তত্তাবধায়ক সরকারের প্রথম দিকেও পুলিশ বেশ ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা দেখালেও তার তারা সেই অবস্থান যে ত্যাগ করেছে তা বেশ ভালভাবেই বোঝা যাচ্ছে তাদের আচরণে। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে পুলিশ দিয়ে কখনও রাজনৈতিক প্রতিরোধ ঠেকানো যায় না।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা উৎকন্ঠার জন্ম দিয়েছে। এতে জোর করে নির্বাচিত সরকার দেশে ও বাইরে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। তার আলামত ইতোমধ্যে আমরা দেখতে পারছি। নির্বাচন পর্যবেক দলগুলো নির্বাচন প্রত্য করার কোন উৎসাহ আর নেই। সামরিক বাহিনীর সাহায্যে যে খুব সুবিধা হবে না, তার আলামত বেশ ভালভাবেই দেখা যাচ্ছে। বড়ো দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন একটা হাস্যকর প্রহসনে পরিণত হচ্ছে তা বিএনপি-জামাত সরকার দেরীতে হলেও বুঝতে পারছে। কিন্তু সময় যে তাদের অনুকূলে আর নেই তা কি তারা বুঝতে পারছে? নির্বাচন যতো বিলম্বিত হবে তারা তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ততো হারাবে। অন্তর্কলহ ততো বাড়বে। সাধারণ মানুষও ধৈর্য হারাতে থাকবে।

দু’টি প্রধান জোট আলোচনার মাধ্যমে প্রথম থেকে নির্বাচন ও তত্তাবধায়ক সরকার সংস্কারের স্বার্থে কাজ করলে দেশ এরকম বিপর্যয়ের দিকে যেতো না। কিন্তু বিএনপি-জামাত জোটের একগুঁয়েমী ও ধান্ধাবাজির ফলে যে সংকট তৈরী হলো তার ভোগান্তি কিন্তু জনগণকেই পোহাতে হচ্ছে। বিএনপি যে কূটকৌশলের মাধ্যমে দায়সারা নির্বাচন করে পার পাবে না তা তারা বেশ হাড়ে হাড়ে টের করতে পারছে। বিএনপি-জামাত জোট যে তাদের রাজনৈতিক দাবা খেলায় দূরদর্শিতা দেখাতে পারেনি তা খুবই স্পস্ট। তাই বর্তমান সংকটে বিএনপি জামাত জোট তাদের পায়ের নীচ থেকে দ্রুত মাটি হারাচ্ছে।

(একই সাথে প্রকাশিত হলো সামহোয়্যার ইন ব্লগেআড্ডার ইংরেজী ব্লগে)

Saturday, January 06, 2007

সংকটের উওরণ কোথায়:

বিএনপি জামাত জোট নির্বাচন কমিশন ও তত্ত¡াবধায়ক সরকারকে দলীয়করণ করেছে মতার প্রথম দিক থেকে। বিএনপি জোট প্রথম থেকেই নির্বাচনকে নিজেদের মতো সাজাতে গিয়ে এর স্বচ্ছতা ও নির্দলীয় চরিএকে ুন্ন করেছে। আওয়ামী লীগেরে নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট প্রথম থেকে আজিজ আর হাসান নিয়ে যে আপত্তি জানিয়ে আসছিল তাকে কূটকৌশলে সময় পেনের মাধ্যমে সংকটটি তত্ত¡াবধায়ক সরকারের মাথায় চাপিয়ে দিয়ে মতা থেকে সরে দাঁড়ায়। অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে যে অর্ধশত মানুষ প্রাণ হারালেন তার মূল কারণ বিএনপি-জামাত জোটের রাজনৈতিক ধান্ধাবাজি। রাজনৈতিক সংকট ও অচলাবস্থাকে একটি বিপজ্জনক মোড় নেয় যখন বিচার বিভাগে বিএনপি’র রাজনৈতিক প্রভাব স্পস্ট হয়ে দাঁড়ায়। ঘটনার পরম্পরা বিএনপি’র রাজনৈতিক প্রভাবকে খুব স্পস্ট করে দেয়।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট রাজনৈতিক কূটকৌশলে যে বেশ কয়েকবার ধরাশায়ী হয়েছে তা খুব সহজেই বোঝা যায়। বিএনপি জোট যখন নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন আওয়ামী লীগ আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ও তত্ত¡াবধায়ক সরকারের নিরপেতার জন্য ব্যস্ত। কিন্তু এর ফলাফল বিএনপি যেভাবে মাথায় হাত বুলিয়ে গোলায় ধান তুলবে তা ভেস্তে যাওয়াতে একটু বেকায়দায় পড়ে আছে। নির্বাচন যতো বিলম্বিত হবে তাতে সাংবিধানিক সংকটের চেয়ে বিএনপি’র অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও নির্বাচনী ব্যয় ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাবে তা সবাই জানে। বিএনপি ছলে বলে কৌশলে নির্বাচনী বৈতরণী পার পাবে এবং প্রয়োজনে জামাতকে বিরোধী দলে অলঙ্কৃত করবে সেই কৌশল এখন বেশ স্পস্ট হয়ে উঠেছে। বিএনপি’র এই একগুঁয়েমীর মাশুল আগেও দিয়েছে এবং এবার আরও মারাত্মকভাবে দিবে তা দেখার জন্য বেশীদিন অপেক্ষা করতে হবে না।

(চলবে- বাকী অংশ আসছে ২৪ ঘন্টার মধ্যে। এর পরের অংশে থাকবে রাজনৈতিক দরকষাকষিতে কে জিতল কে হারল। নির্বাচনে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা কি হবে? আওয়ামী লীগ কি ঠিক পথে যাচ্ছে? রাজনীতিতে কি মেরুকরণ স্পস্ট হচ্ছে---অপেক্ষা করুন)

সামহোয়্যার ইন ব্লগে সংকট কি পরিকল্পিত?

ব্লগের অবস্থা যাচ্ছে তাই। নোংরামি চলছে। ইচ্ছে মতো নিক নেইম নিয়ে পোস্ট চলছে। এক ধরণের অসুস্থতা ও অপরিচ্ছন্নতার ছড়িয়ে সুস্থ মননকে নির্বাসনের অপচেস্টা চলছে। নেপথ্যের কারণ বের করার কোন ইচ্ছে বা রুচি আমার নেই। তবে অপচেস্টা যে খুব ইচ্ছাকৃত ও সুপরিকল্পিত তা স্পস্ট হয়ে উঠছে। এর প্রতিকার নিয়ে নির্বিকার ও নিরাসক্ত মনোভাব বেশ রহস্যজনক ও আপওিকর। যারা নিয়মিত আড্ডা পড়েন তাদেরকে অনুরোধ জানাব আমার ইউনিকোড বাংলা ব্লগে গিয়ে পড়তে। আমি চেস্টা করব আড্ডার পোস্ট ব্লগস্পটে একইসাথে প্রকাশ করতে।

আপনাদের জন্য আড্ডার ঠিকানা হচ্ছে: ইউনিআড্ডা

তবে নেকড়ের গল্প ফেঁদে আপাতত সুবোধ ও অবোধ নিরীহ হরিণ শিকার করার কোন ইচ্ছে আমার নেই। পর্দার আড়ালে থাকা অনেক ব্লগারদের অবস্থানটা ঝোপের আড়ালে নেকড়ের চেয়ে যে কম হিংস্র নয় তা আচরণে আর গর্জনে বেশ দৃশ্যমান হয়ে উঠে। আকেলমন্দদের জন্য ইশারাই যথেস্ট। পরিচ্ছন্নতা অভিযানের নামে ইচ্ছেমতো মডারেশনের একটা সুপ্ত খায়েশ অনেকের নাফসকে বেশ নাড়া দিয়ে থাকতে পারে। অন্তত: নোংরামী ছড়িয়েও যদি তাদের মনোবাসনা পূর্ণ হয়। অনেকে যে এখানে ব্লগকে নিজস্ব আদর্শ ও অন্ধত্ব প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন এবং সেই ল্েয একচ্ছএ আধিপত্য বজায় রাখার অপকৌশল হিসেব স্ক্যায়ার ট্যাকটিক ব্যবহারে পারদর্শী হয়ে উঠছেন তাও বেশ দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। বালসুলভ প্রগলভতায় যে দূরদর্শিতা ও বুদ্ধিমওার ছাপ থাকে না এবং এটা যে বেশ হাস্যকর হয়ে উঠে তা ইনিয়ে বিনিয়ে বলার দরকার নেই।

অনেকেই এখানে বিশেষ ফোরাম তৈরী করে নিজস্ব জনপ্রিয়তা ও রাস্তার দাঙ্গাবাজি ছড়াতে চাচ্ছে তা খুব স্পস্ট। অনেক দিন আগে এক সিনিয়র ভাইকে বললাম ব্লগে আসতে। তার অভিজ্ঞতা যে সুখপ্রদ ছিল না তা পরে জানতে পারলাম। তিনি জানালেন এগুলো তো টীন এজারদের বাঁদরামির জায়গা। সিরিয়াস লেখার চেয়ে গালাগালি আর মৌলবাদীদের আখড়া। কথা যে একেবারে মিথ্যে তা নয়। অনেকেই তাদের রাজনৈতিক মিশনের অফিসের মতো ২৪ ঘন্টা পাহারা দিয়ে বসে থাকেন তারা কি করেন আমার জানার দরকার নেই। কিন্তু তার ফলাফল যে নোংরা কাদা ছোড়াছুড়ি হচ্ছে ত বোঝা খুবই কস্টকর নয়। এখানে যারা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে নিয়মিত লেখেন তাদের লেখাগুলো চাপা দিলে অনেকের মিশন হয়তো একটু সহজতর হয়ে পড়ে। এধরণের দিবাস্বপ্ন যারা দেখছেন তাদেরকে ভীষণভাবে হতাশ হতে হবে।

বাংলা ব্লগের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা এর লেখার বৈচিএ্যে ও ভাবনার বৈপরীত্যে। একে একমূখী করে খুব একটা অর্জন না হলেও বিটিভি’র নতুন সংস্করণ হিসেবে ব্লগ জগতে এর বিস্তৃতিতে অনেকে কামিয়াবী কামিয়াবী বলে চীৎকার করতে পারেন। বিকারগ্রস্থ মানুষদের বিকৃতির শেষ নেই। আর তাকে উৎসাহ আর বাহবা দেওয়ার লোকেরও অভাব দেখি না। নোংরা জিনিসে মন্তব্য দিয়ে একে প্রথম পাতায় স্থান করে দিয়ে অনেকে বেশ আনন্দ পান। বিকৃতির পেছনে অন্ধ প্রবৃওি কাজ করে। কাজ করে পেছনে হাঁটার চেস্টা। যারা সত্যের মুখোমুখি হতে খুব ভয় পান তারা আড়ালে আবডালে থেকে ডাল পালা নাড়া দিয়ে তৃপ্তি পেতে চান। আজকাল প্রত্যাশার সীমান্ত খুব সংকুচিত। কারণ, অনেক নীরবতা সম্মতির প্রচ্ছন্ন প্রকাশ। হয়তো এর সমান্তরালে রয়েছে পৃষ্ঠপোষকতা। কারণ বজ্রপাতে যখন কুম্ভনিদ্রা ভাঙ্গে না, তখন তা ইচ্ছেকৃত বললে কি খুব ভুল বলা হয়?