Thursday, January 11, 2007

রাজনৈতিক দুর্যোগের ঘুর্ণিপাকে:

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্যোগের ঘনঘটা যা এতোদিন আশঙ্কা করা হচ্ছিল তা আগামী কয়েক সপ্তাহের নির্মম বাস্তবতা হতে যাচ্ছে। মহাঐক্যজোটের তিনদিনের অবরোধের শেষদিনে জানুয়ারীর ৯ তারিখে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ রণক্ষেেএ পরিণত হয় পুলিশ যে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশী মারমূখী তা গত ক’দিনে বেশ পরিস্কার হয়েছে। ১৪ দলীয় জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতারা যেভাবে পুলিশী নির্যাতনের শিকার হন আর অবরোধের তীব্রতা প্রমান করে দু’পই বড্ডো অনড়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে পুলিশ এতোটা মারমূখী হার্ডলাইনে কেন? এটা সম্ভব হয়েছে যখন পুলিশ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত ও আশ্বস্ত হয়েছে যে আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামাত সরকার যে কোনভাবে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসছে। কারণ তত্তাবধায়ক সরকারের প্রথম দিকেও পুলিশ বেশ ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা দেখালেও তার তারা সেই অবস্থান যে ত্যাগ করেছে তা বেশ ভালভাবেই বোঝা যাচ্ছে তাদের আচরণে। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে পুলিশ দিয়ে কখনও রাজনৈতিক প্রতিরোধ ঠেকানো যায় না।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা উৎকন্ঠার জন্ম দিয়েছে। এতে জোর করে নির্বাচিত সরকার দেশে ও বাইরে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। তার আলামত ইতোমধ্যে আমরা দেখতে পারছি। নির্বাচন পর্যবেক দলগুলো নির্বাচন প্রত্য করার কোন উৎসাহ আর নেই। সামরিক বাহিনীর সাহায্যে যে খুব সুবিধা হবে না, তার আলামত বেশ ভালভাবেই দেখা যাচ্ছে। বড়ো দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন একটা হাস্যকর প্রহসনে পরিণত হচ্ছে তা বিএনপি-জামাত সরকার দেরীতে হলেও বুঝতে পারছে। কিন্তু সময় যে তাদের অনুকূলে আর নেই তা কি তারা বুঝতে পারছে? নির্বাচন যতো বিলম্বিত হবে তারা তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ততো হারাবে। অন্তর্কলহ ততো বাড়বে। সাধারণ মানুষও ধৈর্য হারাতে থাকবে।

দু’টি প্রধান জোট আলোচনার মাধ্যমে প্রথম থেকে নির্বাচন ও তত্তাবধায়ক সরকার সংস্কারের স্বার্থে কাজ করলে দেশ এরকম বিপর্যয়ের দিকে যেতো না। কিন্তু বিএনপি-জামাত জোটের একগুঁয়েমী ও ধান্ধাবাজির ফলে যে সংকট তৈরী হলো তার ভোগান্তি কিন্তু জনগণকেই পোহাতে হচ্ছে। বিএনপি যে কূটকৌশলের মাধ্যমে দায়সারা নির্বাচন করে পার পাবে না তা তারা বেশ হাড়ে হাড়ে টের করতে পারছে। বিএনপি-জামাত জোট যে তাদের রাজনৈতিক দাবা খেলায় দূরদর্শিতা দেখাতে পারেনি তা খুবই স্পস্ট। তাই বর্তমান সংকটে বিএনপি জামাত জোট তাদের পায়ের নীচ থেকে দ্রুত মাটি হারাচ্ছে।

(একই সাথে প্রকাশিত হলো সামহোয়্যার ইন ব্লগেআড্ডার ইংরেজী ব্লগে)

No comments: