Friday, January 12, 2007

মহামান্য গবা জলহস্তীর বন্দনা:

ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

(দেশে জরুরী আইন চলছে। তাই আপাতত রাজনীতি নিয়ে নাড়াচাড়া বন্ধ। আপনাদের জন্য রঙ্গদেশের রাজগল্প নিয়ে এই গাতক হাজির)

বহুদিন পর গাতক আবার লিখতে বসলো। রঙ্গদেশে এখন শাস্ত্রীয় সঙ্গীত অনুরাগী বলতে গেলে নেই। তাই গাতক অন্ধকার রাতের অলস অবসরে সঙ্গীত বাদ দিয়ে রাঙ্গাবুড়ীর গল্প ফেঁদে বসল। গেলবার ব্লগরাজ্যে তার বান্দরের কেচ্ছা পড়ে লোকজন অনিন্দ্য আনন্দ পায়। তারপর থেকে গল্প লেখার কচলানি লেগেই আছে। অবশ্য গাতকের ঠিক আজকেই গল্প লেখার কথা ছিল না। রাতের বেলা ব্লগ পাড়ায় কিছু শাখামৃগ ও নেকড়ের হৈ হুল্লোড়ে গাতকের ঘুম ভেঙ্গে যায়।

ঢুলুঢুল চোখে দক্ষিণা জানালা খুলে গাতকের আক্কেলগুড়ুম। রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে গুটিকয়েক নেকড়ে বসে ব্লগের চৌরাস্তায় জটলা বেঁধেছে। নিতান্ত কৌতুহূলী হয়ে তাকিয়ে দেখে নেকড়েরা শোকে কাতর। তারপরেও গুণগুণ করে তাদের মহামান্য গবা জলহস্তীর প্রশস্তি গাচ্ছে। কি হয়েছে, কি হয়েছে? ভিনদেশী গাড়োয়ানদের ঘোড়ার শকটের নীচে পড়ে নেকড়ে দলের আদরের তান্ত্রিক শশকটি মারা গেছে। তারপরেও নেকড়েরা উল্লসিত। কারণ, গাড়ী চাপায় মৃত শশকটির শরীর থেতলে গেলেও চক্ষু একটিও নাকি খোয়া যায়নি। হায়রে নির্বোধের দল!!! এই মাসের বাইশ তারিখে এই পবিএ শশকটিকে রাজবেদীতে উৎসর্গ করে ছলেবলে কৌশলে রাজমহির্ষী রাঙ্গাবুড়ীর রাজসিংহাসনে বসার কথা ছিল। এখন এই শশকের অকাল মৃত্যুতে তারাও প্রমাদ গণনা শুরু করল। সব্বোনাশ, তারপর?

হায়রে রঙ্গদেশ। এখানে রংয়ের শেষ নেই। রাজমহির্ষী রাঙ্গাবুড়ী ষোলকলায় পারদশী। গেলবার নরখাদক নেকড়েদের পাল নিয়ে তিনি রাজ্যপাল তৈরী করলেন। অনেক প্রজাবর্গ এতে ভীষণ ুদ্ধ হয়। সবার প্রশ্ন, যে নেকড়ের পাল পশ্চিমা ভাল্লুকদের সাথে মিলেমিশে লাখো নিরীহ প্রজার রক্তের উষ্ণতার স্বাদ নিলো রাঙ্গাবুড়ী তাদেরকে কিভাবে রাজ্যপালে ঠাঁই দিলেন? তিনি উওর দিলেন, “অতীত নিয়ে নাড়াচাড়া করে গন্ধ ছড়াও কেন”? রাজকীয় সুরে বললেন, “অতীতকে মুছে দাও, তাকাও ঝড়ঝড়া ফকফকা সামনের দিকে। চারদিকে ছড়িয়ে দেব রাজানন্দ, মর্দন করো তেলজল একসাথে”। হতবাক প্রজারা অসহায় দর্শক হয়ে তাকিয়ে দেখল নরখাদক নেকড়েরা শুভ্র মেষকের চর্মধারণ করে দেশসেবক হয়ে গেছে। তন্ত্র-মন্ত্র দিয়ে সম্মোহিত করতে চাচ্ছে। কিন্তু প্রজাসকল তো আর নির্বোধ নয়?

রাঙ্গাবুড়ী বশ করে রেখেছেন সবাইকে। আগামী বাইশের সূর্যসকালে প্রজাসকলের আশীর্বাদে যে রঙ্গরাজ্য আলোকিত হবে তার সম্ভাবনা সন্তানকে তিনি ভ্রুনেই হত্যা করলেন। তার পোষা মহামান্য জলহস্তী বিশ্বস্ততার সাথে রাজসিংহাসন পাহারা দিচ্ছে। কথামতো বাইশের শুভ্র সকালে যে তান্ত্রিক শশকটিকে উৎসর্গ করে রাজসিংহাসনে বসার কথা আজকে সেই শশকটির অকালমৃত্যু রাজ্যব্যাপী শঙ্কা ও ত্রাসের জন্ম দিয়েছে। গবা জলহস্তী ডেকে পাঠিয়েছেন জলপাই রংয়ের সরীসৃপদের। সবাই ভয় পাচ্ছে এই সরীসৃপরা ডাঙ্গা থেকে জলে ফিরবে কবে? প্রজাবর্গের স্কন্ধ থেকে কবে তারা নামবে? এসব সরীসৃপদের বিশ্বাস করা যায় না। আজকে দেশের মহামান্য গবা জলহস্তী সেই আয়োজন করেছেন। সবাইকে মুখে কুলুপ দিয়ে নীরব নিস্তেজ হয়ে থাকতে বলা হয়েছে। আবারও প্রজারা মৃতদের মতো নিস্তব্দ হয়ে থাকবে। প্রজাদের নীরব শবদেহের উপর রক্তচোষা নেকড়ের দল হয়তো উল্লাসে বিচরণ করবে, জলপাই রংয়ের সরীসৃপরা দন্তবিকশিত করে বিচরণ করবে। এভাবেই হয়তো রঙ্গদেশের প্রজাবর্গ আবার পেছনের দিকে হাঁটতে থাকবে। মাথা গুঁজবে নোংরা ইতিহাসের আবর্জনায়...(চলবে)।

“কিসে কিসে ভাব নেই? ভক্ষক ও ভক্ষে বাঘে ছাগে মিল হলে আর নেই রক্ষা
শেয়ালের সাড়া পেলে কুকুরেরা তৈরি,সাপে আর নেউলে ত চিরকাল বৈরী!...”
সুকুমার রায়

No comments: