Wednesday, May 02, 2007

রাজাকার নিয়ে দু'টি কথা:

(একই সাথে আড্ডার বাংলা পাতায় প্রকাশিত)
তর্ক বিতর্কে জড়াবার কোন ইচ্ছে বা রুচি নেই। সহজ বিষয়টিকে জটিল করারও প্রয়োজন নেই। যারা কথার মারপ‌্যাঁচ দিয়ে ৭১'এর রাজাকারের বিষয়টিকে জটিল করতে চায় তাদের সততা ও এথিক্যাল চাপের ব্যারোমিটার ব্লগে দেওয়ার কোন ইচ্ছে নেই। পানি ঘোলা করে মাছ ধরার কেরামতী যারা দেখিয়েছে তারা জানে এর ভেতরের মারফতী কাহিনী। সামরিক জিয়া বিসমিল্লাহ যোগ করে কিন্তু ঘাতক গোলাম আযমকেও দেশের ভেতর ঢুকিয়েছিলেন। স্বার্থ ছিল রাজনৈতিক।

হঠাত করে ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা রাজাকার মান্নানের কথা মনে পড়ল। তাকে একবার সাংবাদিকরা জিগ্যেস করল, "হুজুর আপনার পেপারে সিনেমার অ্যাড দেন কেন"? মান্নানের উততর খুব সাদামাটা ও স্পস্ট ছিল। উনি বললেন, "আমি তো ধর্ম প্রচারের জন্য পেপার খুলি নাই, পেপার খুলেছি বিজনেস করার জন্য"। তাই রাজাকার মান্নান অতীব সত্য কথা নির্লজ্জভাবে বলে দিয়েছেন যা এদেশের রাজনীতিবিদদের মুখোশ খুলে দেয়। ব্যবসার মতো রাজনীতির ধান্ধাও ক্ষমতায় যাওয়া। জনপ্রিয়তা পাওয়া। মানুষের বাহবা নেওয়া। সেই রাজনৈতিক ব্যবসায় রাজাকাররা পেয়ে যায় ক্ষমতার রুটি। খুবই সিম্পল ইকুয়েশন।

তাই, গণঘাতক রাজাকারদের নৃশংসতার কথা তাদের ইতিহাস রাজনীতির পালাবদলে চাপা পড়ে থাকে। তারপর ইতিহাসের জীর্ণ পাতায় বেরে উঠা উইপোকারা গ্রাস করতে চায় ইতিহাসের আলোকিত সত্যগুলোকে। রাজাকারদের বিচার হয়নি, তাই তারা নির্দোষ। রাজাকার জামাতীরা নেহাতই ধর্মভিততিক দল যারা ধর্মের ব্যবহার করে রাজনীতির স্বার্থে। ইনকিলাবের ব্যবসাযিক স্বার্থ আর জামাতীদের রাজনৈতিক স্বার্থ একাকার হয়ে যায়। সব বিভেদ ভুলে যায়। গো আযম, নিজামী, কামরুজ্জামান, সাঈদী সব জাতে উঠে। তারাও জনদরদী হয়। সমাজ সেবক হয়। আবারও মানুষের মুখোশ পড়ে মনুষ্য সমাজে বসবাসের সাহস দেখায়। কারণ?

কারণ, আমরা। আমরা যারা সাদা কালোর তফাতটাকে হালকা করতে চাই। রিকন্সিলিয়েশনের কথা বলে বিভ্রান্ত করতে চাই। তেল জল মেশে না। মেশানোর চেস্টা তাই বৃথা। রাগ, কস্ট, অভিমান, আবেগ দিয়ে রাজাকার প্রতিরোধ সম্ভব না। রাজাকার প্রতিরোধ করতে হলে সচেতন আর আপোষহীন প্রজন্মের দরকার। ইতিহাস সচেতন মানুষের দরকার। জনপ্রিয় সামাজিক এজেন্ডার দরকার। মানুষের দাবী যখন সোচ্চার হয়, ঐক্য যখন প্রবল হয়, তখনই রাজাকার প্রতিরোধ একটা প্রাতিস্ঠানিক চেহারা পাবে। জনপ্রিয় দাবীকে উপেক্ষা করার সাহস বা উপায় কারোই থাকে না। তাই, রাজাকার বিষয়টাকে, একাততরের বিষয়টাকে যারা লঘুভাবে হেলা করতে চান তাদেরকে নির্বুদ্ধিতার প্রতি করুণা জানাই। করুণা জানাই যারা অবলীলায় ধর্ম ভিততিক পোসট দিয়ে মানুষের ধর্মবোধকে প্রতারিত করে।

আমি হতাশ না। আমার এক সিনিয়র বন্ধুর সাথে যখন প্রথম দেখা তিনি বললেন, তোমরা জিয়ার শাসনামলের মানুষ। বিভ্রান্ত হও জিয়ার সামরিক ক্যারিশমা দেখে। তারপর দেখি সেই সিনিয়র বন্ধুটিরও ভুল ভাংগে। সেও দেখে জিয়ার ক্যারিশমা কিন্তু সবার মননকে প্রতারিত করতে পারেনি। ইতিহাস যেখানে জ্বলছে আলেকিত সুর্যের মতো, সেখানে কয়েক খন্ড মেঘ আর কিছু দমকা বাতাস এলোমেলো করতে পারে আজকের সকালের আয়োজন, কিন্তু তাই বলে পারে না সূর্যের আগমনকে ঠেকাতে। রাজাকার প্রতিরোধে সেই সূর্য সন্তানদের প্রণতি জানাই যারা এদেশের পতাকাকে এগিয়ে নিবে। যারা রাজাকারদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। ইতিহাসকে নতুন করে নির্মাণ করবে তাদের আপোষহীন হাত দিয়ে।

No comments: